কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভাগ্য নির্ধারণ হল শুক্রবার। দ্বিতীয়বারের জন্য ভারতের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন কি না তা ঠিক করলেন কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্রের ভোটাররা। যদিও রাহুলের ভাগ্য পরীক্ষা হবে আগামী ৪ জুন। কারণ ওই দিন গোটা দেশজুড়ে ভোটের গণনা।
এদিন দ্বিতীয় দফায় দেশটির ১৩ টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৮৮ টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্রটি। দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হিসাবে জয়ের জন্য এই কেন্দ্র থেকে লড়াই করেছেন দলটির সাবেক সভাপতি। স্বাভাবিকভাবে সকলেরই নজর ছিল এই কেন্দ্রের দিকে।
শেষবার ২০১৯ সালে এই ওয়েনাড আসনে সিপিআই প্রার্থী পিপি সুনিরকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ভোটে পরাজিত করে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। এবার এই কেন্দ্রে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআই প্রার্থী অ্যানি রাজা, বিজেপির কে. সুরেন্দ্রণ। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবারে নির্বাচনটা অপেক্ষাকৃত কঠিন।
গত লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসন থেকেও নির্বাচনে লড়েছিলেন রাহুল। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজারের বেশি ভোটে হেরে যান তিনি। কিন্তু ওয়েনাদ কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন তিনি। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত একটি মাত্র আসন থেকেই লড়াই করেছেন তিনি। তবে দলীয় সূত্রে খবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশের আমেঠি কেন্দ্র থেকেও এবার ফের লড়তে পারেন রাহুল। এই দফার নির্বাচন শেষেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাহুল ও তার দল। সেক্ষেত্রে ওয়েনাড রাহুলকে শুন্য হাতে ফেরালেও আমেঠিতে রাজনৈতিক ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে তার হাতে।
এদিন দ্বিতীয় দফার ভোট শুরুর আগেই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে রাহুল গান্ধী লেখেন ‘আজ ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এবং প্রতিটি ভোট নির্ধারণ করবে যে পরবর্তী সরকার বিলিয়নিওর’দের (১০০ কোটি রুপির মালিক) হবে নাকি ১৪০ কোটি ভারতীয়দের হবে। তাই প্রত্যেক নাগরিককে বলবো তারা যেন তাদের নিজেদের ভোটটা প্রদান করে। এবং সংবিধানের একজন সৈনিক হয়। এই ভোট গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে।’
এছাড়াও কর্নাটকের বিজাপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেন রাহুল। তিনি বলেন আজকাল বক্তব্য রাখার সময় প্রধানমন্ত্রীকে খুব নার্ভাস লাগছে। হয়তো আগামী দিনে স্টেজের উপরে তাকে চোখের পানি ফেলতেও দেখা যেতে পারে। গত ১০ বছরে তিনি অনেক গরিব মানুষের অর্থ ছিনিয়ে নিয়েছেন। দেশের ২২ জন ব্যক্তিকে এত অর্থ দিয়েছেন যেটা ৭০ কোটি মানুষের অর্থের সমান। প্রধানমন্ত্রী যে অর্থ বিলিয়নিয়রদের দিয়েছেন, আমরা তার থেকেও বেশি অর্থ গরিব মানুষদের দেব।’
দেশজুড়ে এই দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৫.৮৮ কোটি, এরমধ্যে ৮.০৮ কোটির বেশি পুরুষ ভোটার, নারী ভোটারের সংখ্যা ৭.৮ কোটির বেশি, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫৯২৯। মোট ১২১০ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে বেশি ৭৪ জন প্রার্থী ছিল বহুজন সমাজ পার্টির, বিজেপির ৬৯, কংগ্রেসের ছিল ৬৮ জন প্রার্থী।
রাহুল গান্ধী ছাড়াও তিরুবন্তপুরম কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, জাতিসংঘের কূটনীতিবিদ শশী থারুর ভাগ্য বাক্সবন্দী হয়েছে। চতুর্থবারের জন্য এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করলেন থারুর। এদিন ভোট প্রদান করেই নিজের জয় সম্পর্কে প্রত্যশা ব্যক্ত করলেন থারুর। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। তাই লড়াইটা এখানেও শেয়ানে শেয়ানে হবে। যোধপুর কেন্দ্রে ছিলেন বিজেপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, কোটা কেন্দ্রে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা প্রমুখ।
অন্যদিকে সেলিব্রিটি প্রার্থীদের মধ্যে মথুরা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী হেমা মালিনী। এ নিয়ে এই কেন্দ্র থেকে তিনবার লড়াই করছেন তিনি। মিরাট কেন্দ্র থেকে এবারই প্রথম লড়লেন অভিনেতা অরুণ গোভিল, ত্রিশুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী মালায়ালাম অভিনেতা সুরেশ গোপী।
এদফায় পশ্চিমবঙ্গের যে ৩ আসনে ভোট নেওয়া হয় সেগুলি হল- বালুরঘাট, দার্জিলিং ও রায়গঞ্জ আসন। বর্তমানে তিনটি আসনই বিজেপির দখলে। বিজেপির প্রত্যাশা এবারও এই কেন্দ্রগুলি তাদের দখলেই থাকবে।
বালুরঘাটে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন বর্তমান সাংসদ ও রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের ক্রেতা ও সুরক্ষা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। দার্জিলিং কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তা, তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন তৃণমূলের গোপাল লামা, কংগ্রেসের প্রার্থী ছিল মুণীশ তামাং। অন্যদিকে রায়গঞ্জে বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পাল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণ কল্যানী এবং কংগ্রেসের আলী ইমরান রামজ (ভিক্টর)।
শুক্রবার গোটা দেশজুড়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ৭ টায়, তা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ টায়। তবে পশ্চিমবঙ্গে দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও গোটা দেশজুড়ে এই নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় ইভিএম ত্রুটির অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে চিঠিও পাঠায় তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন শীর্ষ আদালত বারংবার জানিয়েছে যে ইভিএম নিয়ে কোন গন্ডগোল নেই, কিন্তু তারপরেও মানুষ প্রশ্ন তুলছে। বালুরঘাটে বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারকে ঘিরে ধরে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়, তার অভিযোগ তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী এর পিছনে জড়িত। বালুরঘাট এবং রায়গঞ্জে ভোটারদের প্রভাবিত করার পৃথক অভিযোগ তুলেছে বিজেপি এবং তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে বালুরঘাটের বাতুন গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০২ নম্বর বুথে বিএসএফ ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে এবং সমস্যা তৈরি করার প্রমাণও রয়েছে। তবে বিএসএফের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ২০২ নম্বর বুথে বিএসএফ মোতায়েন নেই৷ তাছাড়া ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত দায়িত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে বিএসএফ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএসএফ তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাল্টা সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ রুপি ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছিল।
বিস্তারিত দেখুন :
ত্রিপুরার খোয়াই জেলায় বড়বিল এলাকায় একটি ভোটের লাইনে মৌমাছির কামড়ে ১৫ জনের মত আহত হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ওই ১৫ জন ভোটারকে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়।
এদিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার অনিল কুম্বলে, ইনফোসিস এর প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণা মূর্তি, অভিনেতা প্রকাশ রাজ, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে।
উল্লেখ্য, মোট সাত দফায় লোকসভার নির্বাচন নেয়া হবে। সেক্ষেত্রে তৃতীয় দফায় ভোট নেওয়া হবে আগামী ৭ মে, চতুর্থ দফায় ১৩ মে, পঞ্চম দফায় ২০ মে, ষষ্ঠ দফায় ২৬ মে এবং সপ্তম শেষ দফার ভোট ১ জুন। ভোট গণনা আগামী ৪ জুন।