spot_img
35.7 C
Kolkata
Friday, June 13, 2025
spot_img

 মোক্ষ লাভে মহাকুম্ভে, শাহী স্নানে পাপস্খলন!!

কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :

পূর্ণা মজুমদার : কলকাতা  :

বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে আধ্যাত্বিক সাধুসন্তদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে মাঘ মাসের এই পুণ্যমেলা তথা কুম্ভমেলা। স্তরভেদে নানান মানুষজন এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরের মানুষজনেদের কাছেও কুম্ভ মেলার বহুল জনপ্রিয়তা। ঐতিহাসিক মতভেদে প্রায় ১০০ বছর বা তারও বেশী প্রাচীন এই কুম্ভ মেলা। মাঘ মাসের পৌষ সংক্রান্তির তিথি ধরে শুরু হওয়ার জন্য চলতি ভাষায় কুম্ভ মেলা মাঘ মেলা নামেও পরিচিত। ইংরেজিতে এই কুম্ভ মেলা “গ্রেট পিচার ফেস্টিভ্যাল” – নামে জনপ্রিয়।

 

স্থান ও সময় :    এবছরে  ১৩ই জানুয়ারি থেকে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী কুম্ভ মেলার স্থান নির্ধারিত হয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে।

কথায় বলে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর !!

কথিত আছে, কুম্ভ মেলায় দেবাদিদেব শিবের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। মর্তলোকে এসময় উন্মুক্ত হয় স্বর্গের দরজা। নানান দেবদেবীরা ছদ্মবেশে কুম্ভ মেলায় বিচরণ করেন। কুম্ভ মেলায় গঙ্গা স্নান করে শিবের কাছে প্রার্থনা করলে পূর্ণ হয় মনোবাঞ্ছা। প্রাপ্ত হয় স্বয়ং ভগবান শিবের আশীর্বাদ। মূলত সূর্য ও গুরু (বৃহস্পতি) অবস্থান বিবেচনা করেই মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়। তাই মেলার সময় উভয় দেবতারই পূজা করা হয়। পাশাপাশি গঙ্গা নদীর সাথে সংযুক্ত এই কুম্ভ মেলা।

এই প্রায় দেড়মাস ব্যাপী শতপ্রাচীন ইতিহাস বয়ে নিয়ে আসা কুম্ভ মেলা কেবলি বিশ্বের বৃহত্তম জনসমাবেশ নয়, পাশাপাশি লুকিয়ে আছে নানান ঐতিহাসিক বৈচিত্র্যতা, জ্যোতিষশাস্ত্র সহ আধ্যাত্মিকতার অভূতপূর্ব পরম্পরা । জ্যোতির   বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ  অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। কারণ এবারে অনুষ্ঠিত হয় হচ্ছে মহাকুম্ভ যা ১৪৪ বছর অন্তর একবারই পালিত হয়, এমন বিশেষ নক্ষত্র মন্ডলীয়  সারিবদ্ধতা এবং ব্যতিক্রমী অনুকূল স্বর্গীয় কনফিগারেশনের অধীনে সুদীর্ঘ ১৪৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বিরল যোগের মহাকুম্ভ উৎসবে। শেষবার এই ধরনের একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত প্রান্তিককরণ ঘটেছিলো ১৮৮১ সালে।

এহেনো বিরল যোগ সাধু এবং তীর্থযাত্রী উভয়ের জন্য একইভাবে অবিশ্বাস্যকরভাবে বিরল উপলক্ষ গড়ে তোলে। বিভিন্ন ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠান সহ কঠোর ব্রম্ভচর্যে ব্রতী আধ্যাত্মিক যোগী, নাগা সাধু – সন্ত , অঘোরী এবং তান্ত্রিকদের জ্ঞান বিতরণ অন্যদিকে আধ্যাত্মিক বার্তা প্রদান সহ অমলিন ধর্মীয় বাতাবরণ চলে। এই মহাকুম্ভর মুখ্য আকর্ষণে পবিত্র গঙ্গা, যমুনা, এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করে আধ্যাত্মিক শুদ্ধি কামনা করা হয়। মনে করা হয়, এই শাহী স্নানে সকল পাপ ধুয়ে পুণ্য অর্জিত হয়। সাথেই জন্ম – মৃত্যু চক্রের সমাপ্তি ঘটে মোক্ষ লাভ হয়। অন্যদিকে চন্দ্র-সূর্য ও বৃহস্পতির শুভাবস্থান সহ অন্যান্য গ্রহের শক্তিশালী প্রভাবের কারণে এই যোগে গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গম স্থলে মহাজাগতিক শক্তির উপস্থিতি থাকে যা একইসাথে শরীর – স্বাস্থ্যের জন্য বহুল উপযোগী ।

কুম্ভ মেলার নির্ধারিত  চার তীর্থস্থান  :

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে  গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে বা ত্রিবেণী সঙ্গমে।

উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে গঙ্গা নদীর তীরে।

মহারাষ্ট্রের নাসিকে গোদাবরী নদীর তীরে।

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে শিপ্রা নদীর তীরে।

প্রতিবার  চন্দ্র সূর্য ও বৃহস্পতির অবস্থান বিচার করে কুম্ভ  মেলার স্থান নির্ধারণ করা হয় ।

কুম্ভ মেলার প্রকারভেদ :

পূর্ণ কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি ১২ বছর অন্তর।

অর্ধ কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি ৬ বছর অন্তর।

কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি ৪ বছর অন্তর।

মহা কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রতি ১৪৪ বছর অন্তরের বিরল যোগে।

“কুম্ভমেলা”- র ব্যুৎপত্তি ও অর্থ  :

সংস্কৃত “কুম্ভ” শব্দের আক্ষরিক অর্থ “কলস, ঘট, বা পাত্র”। এটি প্রায়শই জল ধারণের পাত্র হিসেবে বা পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, অমরত্বের রসায়ন অমৃত সম্পর্কিত পৌরাণিক কিংবদন্তিমূলক বৈদিক গ্রন্থে পাওয়া যায়। “মেলা” শব্দের সংস্কৃত অর্থ বিশেষ করে সম্প্রদায় উদযাপনের প্রসঙ্গে “একত্রিত হওয়া, বা মিলিত হওয়া, একসাথে চলা ” ইত্যাদি । এই শব্দটি ঋগ্বেদ এবং অন্যান্য প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থেও উল্লেখিত। সুতরাং, “কুম্ভ মেলা” মানে “জল বা অমরত্বের কারণীভূত অমৃত” এর চারপাশে “সমাবেশ, সম্মেলন বা ঐক্য”।

বিবিধ মতে কুম্ভ মেলার প্রবর্তন :  

প্রয়াগ এবং স্নান তীর্থযাত্রার প্রথম উল্লেখ ঋগ্বেদ পরিশিষ্টে ( ঋগ্বেদের পরিপূরক) পাওয়া যায়।তুলসীদাসের ১৬শ শতাব্দীর “রামচরিতমানস” – এ প্রয়াগের একটি বার্ষিক মেলার উল্লেখ রয়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে অষ্টম শতাব্দীতে হিন্দু দার্শনিক এবং সাধু শ্রী আদি শঙ্করাচার্য ভারতজুড়ে বিভিন্ন মঠ, ধর্মীয় সমাবেশ, দার্শনিক আলোচনা এবং বিতর্ক চালু করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। তারই নিদর্শন হিসেবে প্রবর্তিত হয় কুম্ভ মেলার। বলা হয়, উনিশ শতকের আগে “কুম্ভ মেলা” নামে কোনো বিশাল তীর্থযাত্রার বা ধর্মীয় জনসমাবেশের প্রামাণ্য  ঐতিহাসিকভাবে নেই। 

প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে প্রয়াগ এবং নদীতীরবর্তী উৎসবের অন্যান্য উল্লেখ রয়েছে। যেখানে বর্তমান কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কুম্ভ মেলার নিশ্চিত  বয়স এখনো অনিশ্চয়তার আড়ালে। ৭ম শতাব্দীর বৌদ্ধ চীনা পরিব্রাজক জুয়ানজাং (হিউয়েন সাং) রাজা হর্ষ এবং তার রাজধানীর বিররণে তিনি প্রয়াগের নাম উল্লেখ করেছেন। যেখানে তিনি শত শত ” দেব মন্দির” এবং দুটি বৌদ্ধ মঠ সহ একটি পবিত্র হিন্দু শহর , ধর্মীয় রীতি হিসেবে নদীর সংযোগস্থলে স্নান কর্মের কথাও উল্লেখ করেছেন । কিছু পণ্ডিতগণের মতানুরাসে, ইহাকে কুম্ভ মেলার প্রাচীনতম ঐতিহাসিক বিবরণ হিসেবে ধরা হয়।    যা বর্তমান প্রয়াগে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল। ঐতিহাসিক তথ্যনুসারে,  পুষ্যভূতি বংশীয় রাজা হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে প্রায় পাঁচ বছর অন্তর মাঘ মাসেই প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা আয়োজিত হত। এই মেলা বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। মেলায় ধর্মীয় আচারবিধির পাশাপাশিই চলতো প্রজাদের ব্যবসা -বাণিজ্য। এটি ছিলো সেসময়ে প্রজাদের আয়ের অন্যতম উৎস।

অন্যদিকে, বৌদ্ধ ধর্মের পালি শাস্ত্রেও উল্লেখিত।  মঝিম নিকায়ের ধারা ১/৭-এ, বুদ্ধ বলেছেন, পয়াগ স্নান (সংস্কৃত: प्रयाग) ক্রুর এবং মন্দ কর্মসমূহ ধুয়ে ফেলতে পারে না, বরং গুণী ব্যক্তির কর্ম ও হৃদয় শুদ্ধ হওয়া উচিত।

মহাভারতেও লক্ষনীয় এই প্রথা, অতীতের ভুল এবং অপরাধের জন্য প্রায়শ্চিত্তের উপায় হিসাবে প্রয়াগে স্নান ও তীর্থযাত্রার উল্লেখ রয়েছে। মহাভারতে মহাযুদ্ধের পূর্বে  যাত্রার রীতিও উল্লেখিত। “যে দৃঢ় [নৈতিক] ব্রত পালন করে, মাঘের সময় প্রয়াগে স্নান করে, হে ভরতর্ষভ, সে নিষ্কলঙ্ক হয়ে স্বর্গে পৌঁছে যায়।” অনুশাসন পর্বে, যুদ্ধের পরে, মহাভারত এই স্নান তীর্থকে “ভৌগোলিক তীর্থ” হিসাবে বিস্তৃত করেছে যা অবশ্যই মানস-তীর্থের (হৃদয়ের তীর্থ) সাথে মিলিত হতে হবে । যেখানে সকল পূর্বে ব্যক্তি সত্য, দাতব্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য এবং অন্যান্য মূল্যবোধের সীমায় জীবনযাপন করা হয়।

পৌরাণিক ইতিকথায় কুম্ভ মেলা:  

বৈদিক গ্রন্থ অনুসারে, কুম্ভ মেলার উদ্ভব হয়েছিল আদিকাল থেকেই সমুদ্রমন্থনের দ্বারা। মহর্ষি দূর্বাসার অভিশাপে ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা দুর্বল হয়ে পড়লে , অসুররা দেবতাদের আক্রমণ করে পরাজিত করে । তারপর সমস্ত দেবতারা একত্রে ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়, তখন ভগবান বিষ্ণু তাদের অসুরদের সাথে ক্ষীরসমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণ করার পরামর্শ দেন। ভগবান বিষ্ণুর আদেশে সমস্ত দেবতারা অসুরদের সাথে সন্ধি করে অমৃত আহরণের চেষ্টা করতে লাগলেন। সুর- অসুরের সমুদ্র মন্থন শেষে অমৃত কুম্ভের আবির্ভাবের সাথে সাথে দেবতাদের আদেশে ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত অমৃত কলশ নিয়ে আকাশে উড়ে গেলেন। অতঃপর অসুরগুরু শুক্রাচার্যের নির্দেশে অসুররা অমৃত ফেরত নিতে জয়ন্তকে ধাওয়া করে এবং অনেক পরিশ্রমের পরে গিয়ে মাঝপথে জয়ন্তকে ধরে ফেলে। এরপর অমৃত পাত্র লাভের উদ্দেশ্যে, টানা বারো দিন ধরে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে একটানা যুদ্ধ চলে। এই পারস্পরিক লড়াইয়ের সময়ে পৃথিবীর চারটি স্থানে ( প্রয়াগ , হরিদ্বার , উজ্জয়িনী , নাসিক ) কলস থেকে অমৃতবিন্দু ছিটকে পড়েছিল। সেই সময় চন্দ্র কুম্ভকে ক্ষরণ থেকে, সূর্য কুম্ভ বিস্ফোরণ থেকে, দেবগুরু বৃহস্পতি অসুরদের অপহরণ থেকে এবং শনি দেবেন্দ্রের ভয় থেকে অমৃতের ঘটকে রক্ষা করেছিলেন। বিরোধ শান্ত করতে ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং  মোহিনী রূপ ধারণ করেন এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী সবাইকে অমৃত বিতরণ করেন। এইভাবে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হল।

অমৃত প্রাপ্তির জন্য বারো দিন ধরে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে একটানা যুদ্ধ চলছিল। দেবতাদের বারো দিন মর্তলোকে  বারো বছরের সমান। তাই বারোটি কুম্ভ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি কুম্ভ পৃথিবীতে এবং বাকি আটটি কুম্ভ দেবলোকে অবস্থিত । যা কেবল দেবতা বা দেবত্বের অধিকারীরা অর্জন করতে পারেন, সেখানে মানুষের প্রবেশাধিকার নেই । সুর – অসুরের যুদ্ধে চন্দ্রাদি দেবতারা কলস রক্ষা করেছিলেন, সেই সময়ের বর্তমান রাশি রক্ষাকারী চন্দ্র-সূর্যাদির গ্রহ যখন আসে। সৃষ্টি হয় কুম্ভ যুগের  অর্থাৎ যে বছর, যে রাশিতে সূর্য, চন্দ্র ও বৃহস্পতির সংযোগ হয় সেই বছর সেই রাশির যোগে যেসব জায়গায় অমৃত বিন্দু পতিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাই সেখানেই আয়োজিত হয় কুম্ভ মেলা।

১৪৪ বছর পরে প্রয়াগ রাজের  মহাকুম্ভ  : 

ইউনেস্কো দারা স্বীকৃত ভারতের কুম্ভ মেলায় গোটা বিশ্বব্যাপী ভক্তদের সম্মেলন দেখা যায়। এবছরের  ১৩ই জানুয়ারি শুরু হয়েছিলো প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা। ১৪৪ বছর পরে এই বিরল যোগে মকর সংক্রান্তির ছিলো ‘অমৃত স্নান’। পর্যটকদের পাশাপাশি নাগা আখড়ারাও ত্রিবেণী সঙ্গমে পবিত্র ডুব দিয়েছিলেন। সকাল ১০ টা বেজে ৩০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ১.৩৪ কোটিরও বেশি ভক্ত শাহীস্নান সম্পন্ন করেছিলেন।

উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং মহা কুম্ভ প্রশাসন 13টি আখড়ার জন্য একটি মসৃণ শোভাযাত্রা নিশ্চিত করেছেন এবং তাদের আচার স্নানের জন্য একটি বিশদ সময়সূচী নির্ধারিত ছিলো। পরবর্তী “অমৃত স্নান” বসন্ত পঞ্চমীর দিন।

সরকারের অনুমান ছিল এবারে কুম্ভ মেলায় ৪০ থেকে ৪৫ কোটি ভক্তের সমাগম হতে চলেছে। সেই অনুমানকে ভিত্তি করেই জন সুরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থাদি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবেই গত ৩০ শে জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে “অমৃত স্নান”- এর যোগ। সেদিন স্থানীয় আনুমানিক সময় প্রায় রাত ২ টোর দিকে বারিকেট বাড়িতে ভেঙে বেপথে ঢুকে পড়ে ভক্তের ঢল। এই মুহূর্তে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, ফলত পদদলিল হয়ে প্রায় 30 জন নিহত এবং প্রায় ৬০ জন আহত হয়। সূত্রে জানা গেছে, সকল নিহত এবং আত্ম ব্যক্তিদের সনাক্তকরণের কাজ চলছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে সেই তালিকায় মহিলাও আছেন। বর্তমানে প্রায় ৬০ জন ব্যক্তিরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সূত্রের মাধ্যমে আরো জানা গেছে, বেশিরভাগই নিহত ব্যক্তিরা  মূলত উত্তর প্রদেশ এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বাসিন্দা।আহতদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং রাজস্থানের বাসিন্দা। পাশাপাশি আহত এবং নিহতদের মধ্যেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ এমনকি কলকাতার বাসিন্দারাও। এখনো স্থানীয় প্রশাসন  ও পুলিশের তরফ থেকে সকলের শনাক্তকরণের কাজ চলছে। সনাক্তকরণ শেষে আহতদের খবর পৌঁছানো হবে।  এই ঘটনার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিবরণ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।

“কুম্ভমেলা” বিশ্বাস ভক্তি ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন ঘটায়। পবিত্র ত্রিবেণীর জলে ডুব দিয়ে মোক্ষ লাভের আশায় বিশ্বব্যাপী ভক্তবৃন্দের ঢল নেমে আসে এই কুম্ভমেলায়। এবার সেই আধ্যাত্মিকতার মহান মেলার ১৪৪ বছর পরের বিরল যোগ ” মহাকুম্ভ ” সরকার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার তরফ থেকে পূর্বেই সুরক্ষা বিষয়ক দৃঢ় আস্থা দেওয়ার পরেও, আলাদা করে আখড়াদের জন্য স্নান ঘাট । সর্বমোট ১৯টি ঘাটের ব্যবস্থা করার পরেও, কিভাবে কুম্ভের মেলাতে সেই ঐতিহাসিক পদদলিত হওয়ার কালো ছবি ফিরে আসে?

আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয় ১৯৫৪ সালের জওহরলাল নেহুরু সরকারের সেই মর্মান্তিক ইতিহাস। তর্কে – বিতর্কে প্রায় ৪০০-৫০০ জনেরও বেশি মানুষ পদদলিত হয়ে মারা গিয়েছিলেন আজকের প্রয়াগে। প্রশ্নচিহ্নর মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো সুরক্ষার ব্যবস্থাপনা। চলেছিলো বহুল বিতর্ক। কিন্তু মেলেনি জবাব থেকে গেছে বিতর্ক।

২০২৫ – এর কুম্ভ মেলায় এসেও কি চলবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। তবে কি বার বার মানুষের পদদলিত হওয়ার দায়ভার বর্তায় অবয়বস্থাপনায় ?

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, যদি ৪০ কোটি পুণ্যার্থী গড়ে ৫ হাজার টাকাও খরচ করলে, তবে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। অন্যদিকে মেলার আয়োজনে প্রশাসনের খরচ হয়েছে আনুমানিক প্রায় ১৬ হাজার টাকা। সরকাররে আশা ৪৫ দিনে বাণিজ্যিক শুল্ক বাবদ অন্তত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা লাভ হতে পারে। সব মিলিয়ে সরকারের ঘরে রাজস্ব আসতে পারে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। লাভবান হবেন ছোট থেকে মাঝারি সকল ব্যাবসায়ী।  অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত এই লাভ শুধু রাজ্যের অর্থনীতিকে নয়, সেই সাথেই দেশের জিডিপিতেও ১ শতাংশ বৃদ্ধি আনতে পারে। নাকি কি অর্থনৈতিক দিক দৃঢ়তা দেওয়ার অধিক আশাই অকাল প্রাণহানীর কারণ হয়ে দাঁড়ালো?

প্রশ্ন রইলো তদন্ত শেষে উত্তরের অপেক্ষায় ।।

 

 

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks