কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
সংগীত জগতে শোকের ছায়া! বাংলায় নক্ষত্রপতন !
বাংলার সংগীত জগতে নেমে এল এক গভীর শোকের ছায়া। প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ১৫ই ফেব্রুয়ারি, শনিবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’-এর স্রষ্টা। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে এসএসকেএম হাসপাতালের মেন ব্লকে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল, যা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তার অনুরাগীরা।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খবর পেয়ে স্বয়ং বুধবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। তবে শেষরক্ষা হল না। ৮৩ বছর বয়সে বাংলা গানের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র বিদায় নিলেন চিরতরে।
শেষ শ্রদ্ধা: বিদায় বেলায় আবেগঘন মুহূর্ত
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে গোটা বাংলা আজ শোকার্ত। তার শেষ যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী সরবাণী মুখোপাধ্যায়সহ রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ক্রীড়া ও যুব বিষয়ক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার শর্মা, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের সচিব দেবব্রত সরকার, সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন, কবি সুবোধ সরকার, পিডিএস-এর সভাপতি সমীর প্রতিতুন্ডু, কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
তার ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর পর তার দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে দান করা হয়। এই মহৎ সিদ্ধান্ত তার সমাজসেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন।
এক অনন্য শিল্পী: বাংলা গানের চিরসবুজ প্রতীক
প্রতুল মুখোপাধ্যায় শুধু একজন গায়ক নন, তিনি ছিলেন বাংলার সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল তারকা। তার জন্ম অবিভক্ত পূর্ববঙ্গে হলেও, পরবর্তীকালে এপার বাংলায় চলে আসেন। তবে তার বাঙালিয়ানা কখনোই ম্লান হয়নি। তার কণ্ঠে গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’ আজও বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে আছে। এই গান যেন বাংলার আবেগ, বাঙালির অস্তিত্বের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তার অন্য জনপ্রিয় গান ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ বাঙালির মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। কেবল গান গাওয়া নয়, তিনি ছিলেন প্রখর প্রতিভাবান গীতিকারও। সিনেমার জগতেও তার অবদান অনস্বীকার্য—’গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবিতে তিনি নেপথ্য শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন।
একাকীত্বের ভালোবাসা ও সংগীতের প্রতি অটুট নিষ্ঠা
প্রতুল মুখোপাধ্যায় বরাবরই একাকীত্ব ভালোবাসতেন, নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন। কিন্তু তার গানের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি সুর মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটে যেত। তার প্রয়াণে সংগীত জগতে যেন এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল। বাংলা সংগীত এক নক্ষত্রকে হারাল, যার আলো চিরকাল বাংলার সংগীতপ্রেমীদের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়া শুধু সংগীত জগতের নয়, বরং সমগ্র বাংলার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার কণ্ঠের প্রতিটি সুর, তার লেখা প্রতিটি গানের কথা বাংলার মাটিতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সংগীতপ্রেমীদের মনে তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন তার কালজয়ী গানের মাধ্যমে। বাংলার সংগীতের আকাশে আরও এক নক্ষত্রের পতন ঘটল, কিন্তু তার সৃষ্টির আলো আমাদের পথ দেখাবে চিরকাল।