কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এই বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভারতের অবস্থান
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করে। তবে, এই নতুন সরকার ভারতের প্রতি বেশ সমালোচনামূলক মনোভাব দেখিয়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ায় তাদের অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রী বলেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভারত আশা করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা এমনভাবে এগিয়ে যাবে যাতে দু’দেশের সম্পর্ক গঠনমূলক ও স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের কিছু উদ্বেগ রয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন।’’
মোদী-ট্রাম্পের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ
বৃহস্পতিবার, ওয়াশিংটন ডিসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেসময় এক সাংবাদিক মার্কিন প্রশাসনের “ডিপ স্টেট” বা গভীর রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে ট্রাম্প স্পষ্ট জানান, “এটি প্রধানমন্ত্রী মোদী অনেকদিন ধরে দেখভাল করছেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আমি তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।’’
তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি বাংলাদেশের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং হাসিনার বক্তব্য
শেখ হাসিনা সরকার পতনের শেষ মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর রাষ্ট্রের (deep state) হস্তক্ষেপের গুজব আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। হাসিনা নিজেও অভিযোগ করেছিলেন, একজন “সাদা ব্যক্তি” তাকে হুমকি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে, নাহলে তার সরকার টিকবে না।
তবে, বাইডেন প্রশাসন এই অভিযোগের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রমাণ দেয়নি বা হাসিনার দাবির স্বপক্ষে কোনো বক্তব্য রাখেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগের মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালান।
বর্তমানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বিচার ব্যবস্থা সংস্কার, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতা।
এছাড়া, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জ্যাকবসন সম্প্রতি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন এবং দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ কী?
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছুটা আলাদা।
✔ ভারত চায় বাংলাদেশে স্থিতিশীল সরকার টিকে থাকুক, যাতে তাদের সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকে।
✔ যুক্তরাষ্ট্র চায় গণতন্ত্র এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত হোক, যদিও তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
✔ বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ভারতের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে, যা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে বৈদেশিক বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ কি নতুন সরকার পরিচালনায় স্থিতিশীলতা আনতে পারবে, নাকি ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।