কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
নবগ্রামের ফেন্সি ঘোষ (২৪) মাতৃত্বের আনন্দ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিরতরে বিদায় নিলেন, আর সেই মৃত্যুর জন্য চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। সদ্যোজাত শিশুকে কোলে নেওয়ার আগেই অকালে প্রাণ হারান তিনি। ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর।
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ প্রচণ্ড প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে নবগ্রামের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন ফেন্সি ঘোষ। মধ্যরাতে সুস্থভাবেই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রক্তক্ষরণ এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও চিকিৎসক ও নার্সরা যথাযথ চিকিৎসা দেননি বলে অভিযোগ।
ফেন্সির পরিবারের দাবি, “যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো চিকিৎসা পেলে ফেন্সিকে বাঁচানো যেত। কিন্তু হাসপাতালের গাফিলতির কারণেই আমাদের মেয়েকে হারালাম।” পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বারবার ডাক্তার ও নার্সদের ডাকলেও তাঁরা তেমন গুরুত্ব দেননি। অভিযোগ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না মেলার কারণেই মৃত্যু হয় ফেন্সির।
সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বচসায় জড়ান হাসপাতালের কর্মীরা। এরপরই ক্ষুব্ধ আত্মীয়রা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখার্জি অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে হাসপাতালের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল, আমাদের মেডিক্যাল টিম যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। তবে পরিবার চাইলে ময়নাতদন্ত করা যেতে পারে।”
এদিকে, মৃতার পরিবার লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে থানায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্তকারী দল। যদি চিকিৎসায় গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
এমন ঘটনা নতুন নয়, প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা বারবারই সামনে আসছে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ বহুবার উঠেছে, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয় খুব কম ক্ষেত্রেই। ফেন্সি ঘোষের মতো আরও কত মায়ের প্রাণ যাবে, আর কত সন্তান জন্মের পরেই মা-হারা হবে?
হাসপাতালগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর চিকিৎসায় অবহেলার বিরুদ্ধে কবে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে এক নবজাতক তার মাকে হারাল, আর এক পরিবার অকালে তাদের প্রিয়জনকে হারানোর বেদনায় ভেঙে পড়ল।