কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ডুয়ার্স: চা বাগানে ফের চিতাবাঘ আতঙ্কের অবসান। দীর্ঘদিন ধরে চা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা চিতাবাঘকে অবশেষে খাঁচায় বন্দি করতে সক্ষম হল বনদপ্তর। শনিবার সকালে জলপাইগুড়ির বানারহাট ব্লকের বিন্নাগুড়ি চা বাগানের ৭ ও ৮ নম্বর সেকশনের বাম্বুবাড়ি এলাকায় ছাগলকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে খাঁচায় বন্দি করা হয় চিতাবাঘটিকে।
বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চিতাবাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিন্নাগুড়ি চা বাগানে। চিতার হামলায় ইতিমধ্যেই আহত হয়েছেন একাধিক শ্রমিক। প্রতিদিন বাগানে কাজ করতে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতেন শ্রমিকরা। এই পরিস্থিতিতে চা বাগান কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বনদপ্তরের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান।
খাঁচা পাতার সিদ্ধান্ত, অবশেষে সফল অভিযান
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচদিন আগে বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের উদ্যোগে চা বাগানে দুটি খাঁচা পাতা হয়। এর মধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর সেকশনের বাম্বুবাড়ি এলাকায় ছাগলকে টোপ হিসেবে রেখে একটি খাঁচা বসানো হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালেই সেই খাঁচায় ধরা পড়ে চিতাবাঘটি।
শ্রমিকদের আতঙ্কের অবসান
শনিবার সকালে বাগানের শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চিতাবাঘের গর্জন শুনতে পেয়ে খাঁচার সামনে গিয়ে দেখেন, চিতাবাঘটি বন্দি হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চা বাগান কর্তৃপক্ষ খবর দেয় বনদপ্তরকে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান বনকর্মীরা এবং চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করেন।
চিতাবাঘ ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। দীর্ঘদিনের আতঙ্কের অবসান হওয়ায় তারা বনদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান। শ্রমিকদের বক্তব্য, “প্রতিদিন কাজে বেরোতে ভয় লাগত। কখন কোথায় চিতাবাঘ হামলা করবে, তা বলা যাচ্ছিল না। অবশেষে আজ আমরা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেলাম।”
চিতাবাঘের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তারপর জঙ্গলে মুক্তি
বনদপ্তর সূত্রে খবর, চিতাবাঘটিকে আপাতত বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। যদি কোনও শারীরিক অসুস্থতা না পাওয়া যায়, তবে চিতাবাঘটিকে দ্রুত তার স্বাভাবিক বাসস্থানে, অর্থাৎ জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা আগেই শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে খাঁচা পাতার সিদ্ধান্ত নিই। অবশেষে আমরা সফল হয়েছি। চিতাবাঘটি সুস্থ রয়েছে। খুব শিগগিরই এটিকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
বাগানবাসীর আশঙ্কা — আরও চিতাবাঘ থাকতে পারে!
যদিও চিতাবাঘ বন্দি হওয়ায় শ্রমিকরা আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, তবে অনেকের আশঙ্কা — বাগানের জঙ্গলে আরও চিতাবাঘ থাকতে পারে। স্থানীয়দের দাবি, বনদপ্তরের উচিত পুরো এলাকা স্ক্যানিং করে নিশ্চিত হওয়া, যাতে আর কোনও চিতাবাঘ চা বাগানে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি না করে।
বিন্নাগুড়ি চা বাগানের এক শ্রমিক বলেন, “আমরা চাই বনদপ্তর পুরো এলাকা চিরুনি তল্লাশি করুক। এই চিতাবাঘটি ধরা পড়লেও আশেপাশে আরও চিতা থাকতেই পারে। সেই আতঙ্ক যেন আবার ফিরে না আসে।”
বনদপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, চা বাগান সংলগ্ন বনাঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে আরও খাঁচা পেতে চিতাবাঘ ধরা হবে। তবে আপাতত চিতাবাঘ বন্দি হওয়ায় চা শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বনদপ্তরের এহেন দ্রুত পদক্ষেপের জন্য এলাকাবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।