কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দক্ষিণ দিনাজপুর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময় বলেছিলেন, “চপ বিক্রি করেও অনায়াসে সংসার চালানো যায়।” সেই সময় তার মন্তব্য নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। কিন্তু আজ সেই কথাই বাস্তবে প্রমাণ করে দিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীনেশ সরকার। চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি বিক্রি করেই আজ তিনি শুধুমাত্র সংসার চালাচ্ছেন না, বরং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল জীবনযাপনও করছেন। তার সাফল্য যেন মুখ্যমন্ত্রীর সেই মন্তব্যের বাস্তব রূপ হয়ে উঠেছে।
তিন বছর আগে শুরু করেছিলেন তেলেভাজার ব্যবসা, আজ পরিচিত মুখ দীনেশ ,বালুরঘাট পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীনেশ সরকার আজ একটি পরিচিত নাম। তিন বছর আগে সংসারের অভাব-অনটন ঘোচাতে তেলেভাজার ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। পেশায় আগে দিনমজুরি করলেও, সেই কাজ থেকে ঠিকঠাক আয় না হওয়ায় অবশেষে নিজের একটা দোকান খুলে তেলেভাজা বিক্রি শুরু করেন। আর সেখান থেকেই তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
প্রতিদিন বিকেলের পর থেকেই দীনেশবাবুর দোকানের সামনে উপচে পড়ে ভিড়। গরম গরম চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি কেনার জন্য ক্রেতাদের লাইন লেগে যায়। আশেপাশের এলাকা তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকেও অনেক মানুষ আসেন তার দোকানে একবার স্বাদ নেওয়ার জন্য। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “একবার দীনেশদার হাতে বানানো চপ খেলে বারবার আসতে ইচ্ছা করবে। গরম গরম আর খাস্তা চপ-ঘুগনি খাওয়ার মজাই আলাদা।”
চপ বিক্রি করেই চলছে সাতজনের সংসার, বদলে গেছে আর্থিক অবস্থা দীনেশবাবুর এই তেলেভাজার ব্যবসা শুধু তার পরিচিতি বাড়িয়েছে তা নয়, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থারও আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আগে দিনমজুরি করে যেখানে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ত, এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। চপ বিক্রির আয় দিয়েই তিনি তার স্ত্রী, দুই সন্তান সহ পরিবারের মোট সাতজনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
দীনেশবাবুর স্ত্রী শিউলি সরকার বলেন, “আগে খুব কষ্টে দিন কাটত। সংসার চালানো কঠিন ছিল। কিন্তু যখন থেকে আমার স্বামী এই তেলেভাজার ব্যবসা শুরু করেছেন, তখন থেকে আর অভাব দেখিনি। এখন আমাদের দুই ছেলের পড়াশুনা ঠিকমত চলছে, সংসারে সুখ এসেছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর চপ শিল্প মন্তব্যের বাস্তব রূপ দীনেশ, বলছে স্থানীয় বাসিন্দারা স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন, চপ বিক্রি করেও সংসার চালানো যায়। সেই সময় অনেকেই এই মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু আজ দীনেশ সরকারের সাফল্য প্রমাণ করছে যে, যদি মন থেকে কাজ করা যায়, তাহলে চপ বিক্রি করেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া সম্ভব।”
ওয়ার্ড কাউন্সিলর অনুশ্রী মহন্ত বলেন, “দীনেশ সরকার একজন দৃষ্টান্ত। তিনি চপ বিক্রি করেই আজ সংসার চালাচ্ছেন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার এই সাফল্য আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। বালুরঘাট পৌরসভা সর্বদা তার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
বিরোধীদের কটাক্ষের জবাব দীনেশের সাফল্যে, প্রশংসায় মুখর এলাকাবাসীমুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন চপ শিল্পের কথা বলেছিলেন, তখন বিরোধীরা একাধিকবার কটাক্ষ করেছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, “চপ বিক্রি করে কজন মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারে?” কিন্তু দীনেশবাবুর সাফল্য যেন সেই সমস্ত সমালোচনার মোক্ষম জবাব।
দীনেশবাবু বলেন, “প্রথম দিকে লোকে হাসাহাসি করত। বলত, চপ বিক্রি করেই আর কত টাকা রোজগার হবে? কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। এখন প্রতিদিনের আয়ে ভালোই চলে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর ওই কথাগুলো আমার কাছে অনুপ্রেরণা ছিল।”
ভবিষ্যতে আরও বড় ব্যবসার স্বপ্ন দীনেশের ,বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ জন ক্রেতা আসেন দীনেশবাবুর দোকানে। দিনে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার। দীনেশবাবুর ইচ্ছা, ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় দোকান খুলবেন এবং তেলেভাজার পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও বিক্রি করবেন।
তিনি বলেন, “আমি চাই আমার ব্যবসা আরও বড় হোক। আমার দুই ছেলের পড়াশুনা যাতে ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারি। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে সাহস পেয়েছিলাম, আর আজ আমি সফল।”