spot_img
36.6 C
Kolkata
Saturday, June 14, 2025
spot_img

সাইবার অপরাধ রুখতে কলকাতা পুলিশের বড় পদক্ষেপ, গঠিত হলো ছ’টি বিশেষ শাখা !

কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :

 ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ রুখতে এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। নগরবাসীকে সাইবার অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং প্রতারিতদের দ্রুত অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে কলকাতা পুলিশ গঠন করল ছ’টি বিশেষ শাখা। একইসঙ্গে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে দুটি নতুন পদ — জয়েন্ট সিপি সাইবার এবং জয়েন্ট লিগাল সাইবার।

শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা জানান, “সাইবার অপরাধের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের সাইবার উইংকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই।” তাই এবার থেকে কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে বিশেষ শাখা গঠন করা হচ্ছে। পাশাপাশি, সাইবার ক্রাইমের তদন্ত এবং আইনি পদক্ষেপ আরও জোরদার করতে চালু করা হচ্ছে জয়েন্ট সিপি সাইবার এবং জয়েন্ট লিগাল সাইবার পদ। নগরপাল আশাবাদী, আগামী রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন পেলে কলকাতা পুলিশ আরও দক্ষতার সঙ্গে সাইবার অপরাধের মোকাবিলা করতে পারবে।

ছয়টি বিশেষ শাখা গঠন, বাড়ানো হলো জনবল

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের সাইবার থানাকে আরও শক্তিশালী করতে ছ’টি বিশেষ শাখা গঠন করা হয়েছে। এগুলি হল:

  1. অর্গানাইজড সাইবার ক্রাইম শাখা — এই শাখার মূল দায়িত্ব থাকবে বড় মাপের সাইবার অপরাধ বা সংঘবদ্ধ সাইবার প্রতারণার ঘটনা চিহ্নিত করা এবং তা প্রতিরোধ করা। এই দলে থাকবেন ছ’জন ইন্সপেক্টর এবং ২৫ জন অফিসার। প্রয়োজনে তারা স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) গঠন করে অভিযানে নামবেন।

  2. সাইবার নিরাপত্তা ও সাইবার সেফটি শাখা — নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাইবার সুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করবে এই শাখা।

  3. সাইবার প্রতারণা রিকভারি শাখা — সাইবার অপরাধের ফলে প্রতারিত ব্যক্তিদের হারানো অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়ার জন্য কাজ করবে এই শাখা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতারিতরা অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘ আইনি জটিলতায় পড়েন। সেই সমস্যা দূর করতে এবার এই বিশেষ শাখা সরাসরি কাজ করবে।

  4. সাইবার ফরেনসিক ল্যাব — সাইবার অপরাধের ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করার দায়িত্বে থাকবে এই শাখা।

  5. সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন ও সাপোর্ট শাখা — এই শাখা মূলত কলকাতা পুলিশের সমস্ত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করবে। একইসঙ্গে, অন্যান্য রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধ তদন্তের কাজ করবে এই শাখা।

  6. সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন শাখা — সরাসরি সাইবার অপরাধের তদন্তের দায়িত্বে থাকবে এই শাখা। প্রতিটি প্রতারণা বা সাইবার হ্যাকিং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য থাকবেন নির্ধারিত ইন্সপেক্টর এবং অফিসার।

সাইবার ক্রাইম রিকভারি শাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব

নগরপালের নির্দেশ অনুযায়ী, সাইবার ক্রাইম রিকভারি শাখার কাজ হবে প্রতারিত ব্যক্তিদের দ্রুত অর্থ ফেরত দেওয়া। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, সাইবার প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা টাকা ফেরত পেতে দীর্ঘ সময় ধরে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আটকে যাচ্ছেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারকদের কাছে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ টাকা উদ্ধার করতে পারলেও, তা আইনি জটিলতার কারণে প্রাপকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

নগরপাল মনোজ বর্মা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “প্রতারিতদের টাকা দ্রুত এবং বিনা বাধায় ফেরত দিতে হবে। কোনও প্রকার আইনি জটিলতায় আটকে পড়লে তা অবিলম্বে সমাধান করতে হবে।” তাই সাইবার রিকভারি শাখাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, যাতে টাকা উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রকৃত মালিকের হাতে তুলে দেওয়া যায়।

সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় জনবল বৃদ্ধি

সাইবার থানার কার্যক্ষমতা বাড়াতে জনবলও অনেকটাই বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন থেকে:

  • সাইবার থানায় থাকবেন: ৭ জন ইন্সপেক্টর, ১০ জন অফিসার এবং ২৫ জন কনস্টেবল।
  • অর্গানাইজড সাইবার ক্রাইম শাখায়: থাকবেন ৬ জন ইন্সপেক্টর এবং ২৫ জন অফিসার।
  • সাইবার নিরাপত্তা শাখায়: থাকবেন ২ জন ইন্সপেক্টর এবং ১০ জন অফিসার।
  • সাইবার রিকভারি শাখায়: থাকবেন ৩ জন ইন্সপেক্টর এবং ২০ জন অফিসার।

প্রয়োজনে পুলিশ স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG) তৈরি করবে, যারা দ্রুত সাইবার অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করবে।

নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য

কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, তাদের প্রধান লক্ষ্য নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নগরপাল মনোজ বর্মা বলেন, “সাইবার অপরাধ এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। আমাদের কাজ হবে সেই অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করা এবং প্রতারিতদের অর্থ ফেরত দেওয়া।”

এছাড়া, কলকাতা পুলিশ শহরবাসীর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রচার কর্মসূচি নেবে। বিশেষত অনলাইন ব্যাংকিং প্রতারণা, সামাজিক মাধ্যম হ্যাকিং, ওটিপি ফাঁসের মতো সাধারণ ঘটনা এড়ানোর জন্য নাগরিকদের সতর্ক করতে প্রচার অভিযান শুরু হবে শীঘ্রই।

কীভাবে কাজ করবে নতুন গঠিত শাখাগুলি?

প্রতিটি শাখার নির্দিষ্ট কার্যাবলী থাকবে। সাইবার ফরেনসিক ল্যাব অপরাধের ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ করবে। অপরদিকে, অর্গানাইজড সাইবার ক্রাইম শাখা বড় মাপের প্রতারণার ঘটনা শনাক্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেবে।

সাইবার রিকভারি শাখার অন্যতম প্রধান কাজ হবে প্রতারিতদের অর্থ দ্রুত ফেরত দেওয়া। নগরপালের স্পষ্ট নির্দেশ, “একটি টাকাও প্রতারকদের হাতে পৌঁছাতে দেওয়া যাবে না।”

অন্যদিকে সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়ছে, ততই প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নগরবাসীর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারিতদের অর্থ দ্রুত ফেরত দিতে ছয়টি বিশেষ শাখা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে।

এবার দেখার, কলকাতা পুলিশের এই নতুন উদ্যোগ কতোটা সফল হয় এবং কত দ্রুত শহরবাসী সাইবার অপরাধ থেকে মুক্তি পায়। তবে নগরপালের আশ্বাস, “অপরাধীদের জন্য শহরে কোনও জায়গা নেই, আমরা যেকোনো মূল্যে সাইবার অপরাধ রুখব।”

 

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,400SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks