কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ফের উত্তপ্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সরাসরি ইমারজেন্সিতে ঢুকে মারধরের অভিযোগ উঠল ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আয়েশা কানিজের স্বামী ইরফান আলি তাজের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডেরই এক তৃণমূল কর্মী সামাজিক মাধ্যমে কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠদের অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ।
সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলুটোলা স্ট্রিটে। সেখানে আয়োজিত একটি ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, সেই সময় এক তৃণমূল কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠদের অবৈধ নির্মাণ নিয়ে পোস্ট করেন। এরপরই তার উপর চড়াও হয় কাউন্সিলর আয়েশা কানিজের অনুগামীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রথমে বচসা শুরু হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা হাতাহাতিতে গড়ায়। অভিযোগ, ওই কর্মীকে চপার দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপরই আহত অবস্থায় তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে ফের হামলা, কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
চাঞ্চল্যকরভাবে অভিযোগ, আহত কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও তাকে রেহাই দেওয়া হয়নি। মেডিক্যাল কলেজের ইমারজেন্সি বিভাগে ঢুকে ফের তাকে মারধর করা হয়। অভিযোগের আঙুল সরাসরি ওঠে কাউন্সিলর আয়েশা কানিজের স্বামী ইরফান আলি তাজের বিরুদ্ধে।
চিকিৎসকদের দাবি, রাতের দিকে হঠাৎই বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ইমারজেন্সিতে ঢুকে আহত কর্মীর উপর চড়াও হয়। ব্যাপক চিৎকার, গালিগালাজ এবং মারধর শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ, চলছে তদন্ত
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায় হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীকে সুরক্ষা দেয়। অভিযোগের ভিত্তিতে কাউন্সিলরের স্বামী ইরফান আলি তাজের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে এলাকায় অবৈধ নির্মাণ এবং দাদাগিরির অভিযোগ উঠছিল। সেই বিষয়টিই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আনায় ওই তৃণমূল কর্মীর উপর চড়াও হয় কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠরা।
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চাপানউতোর, দলীয় মহলে অস্বস্তি
ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। তৃণমূলের অন্দরমহলেও চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। দলের একাংশ বলছে, ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে যেভাবে নিজেদের মধ্যে বিবাদ প্রকাশ্যে চলে এল, তা খুবই লজ্জাজনক। তার উপর হাসপাতালে ঢুকে মারধরের ঘটনা তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে।
তবে এই ঘটনার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কাউন্সিলর আয়েশা কানিজ কিংবা তার স্বামী ইরফান আলি তাজের কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত তৃণমূল কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের শনাক্ত করতে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে কাউন্সিলরের স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসনিক মহলে উত্তেজনা, পুলিশের নজরদারি জোরদার
ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সিতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ইমারজেন্সিতে ঢুকে মারধর অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউন্সিলরের স্বামীর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চলছে। খুব দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, ইফতার পার্টি থেকে শুরু হওয়া বিবাদ যে এতদূর গড়াবে এবং তা ইমারজেন্সিতে ঢুকে মারধর পর্যন্ত পৌঁছাবে, তা ভাবতে পারছেন না কেউই। তবে পুলিশের তরফে আশ্বাস, “কাউকে রেয়াত করা হবে না, অভিযুক্ত যেই হোক না কেন।”
এখন দেখার, শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলরের স্বামী ইরফান আলি তাজের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা। আপাতত আহত তৃণমূল কর্মী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।