কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
কলকাতা শহরের অন্যতম বড় সমস্যা হল নিকাশি ব্যবস্থা। ব্রিটিশ আমলের পুরোনো নিকাশি ব্যবস্থার ওপর ভর করেই এতদিন শহরের জল নিকাশ করা হচ্ছিল। তবে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জল জমার সমস্যা এখন কলকাতা পুরসভার জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সমস্যার সমাধানে কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগ শহরে নতুন ১২টি খাল কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন জমা জল দ্রুত নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে পুরোনো এবং প্রায় অচল হয়ে যাওয়া নিকাশি নালা ও নায়নজুলি নতুনভাবে সচল হবে।
এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ নিকাশি বিভাগ তারক সিংহ এক বিশেষ বৈঠক করেন। বৈঠকে বোরা ১৬-এর চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে তারক সিংহ ঘোষণা করেন, শহরে মোট ১৩টি নতুন নিকাশি খাল কাটা হবে, যার মধ্যে প্রধানত ঠাকুরপুকুর ও জোকা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাগুলিতে জল নিষ্কাশনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোথায় কাটছে নতুন খাল?
তারক সিংহ জানিয়েছেন, ১৪২, ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই এই নতুন খালগুলি কাটা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নে বাড়তি পদক্ষেপ
তিনি আরও জানান, ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন থেকে শুরু করে ড্রেজিং করা খালের সংস্কার— সবই এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক সেন্সর বসানো হবে, যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবে নির্ধারণ করা যাবে কোথায় কত বৃষ্টি হচ্ছে, এবং সেই অনুযায়ী দ্রুত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
বিশেষ করে মূল চুড়িয়াল খালের সঙ্গে ছয়টি সংযোগকারী নতুন খাল তৈরি করা হবে। এছাড়া, রানিয়া খালের সঙ্গে তিনটি এবং জুলপিয়া খালের সঙ্গে আরও তিনটি লিংকিং খাল স্থাপন করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন নিকাশি খাল কাটার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্য দফতরগুলোর সহযোগিতা
ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভা বিভিন্ন নিকাশি খালের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি, রাজ্যের সেচ দফতরও কিছু খালের সংস্কারের কাজে যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি নতুন খাল কাটার প্রস্তাব সেচ দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারক সিংহ।
নিকাশি উন্নয়নে গ্রাম পঞ্চায়েতের ভূমিকা
কলকাতার পাশাপাশি, পার্শ্ববর্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নতুন ১২টি খালের মধ্যে একটি খাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়বে, যাতে ওই অঞ্চলের জল জমার সমস্যারও সমাধান করা যায়।
এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, কলকাতার দীর্ঘদিনের জল জমার সমস্যা অনেকাংশে কমবে বলে আশাবাদী পুরসভা।