কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলের অন্যতম জেলা পুরুলিয়া। এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী এলাকা হল অযোধ্যা পাহাড়। এছাড়াও কাশিপুর, বলরামপুর, বরাবাজার, বান্দোয়ানসহ একাধিক ব্লকে বসবাস করেন বহু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের ঐতিহ্যগত জীবিকা ও সংস্কৃতির অন্যতম অংশ হল শালপাতার থালা তৈরি। এই প্রথাগত শিল্প শুধু তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম করছে না, পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দা লক্ষ্মী হেমব্রম ও সুনিতা বাস্কে জানান, শালপাতার থালা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও বায়োডিগ্রেডেবল। এটি প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাহায্য করে।
শালপাতার থালার উপকারিতা
১. পরিবেশবান্ধব: এই থালাগুলি প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয় এবং সহজেই মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে প্লাস্টিক বা থার্মোকলের মতো ক্ষতিকর বর্জ্য সৃষ্টি হয় না।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা: শালপাতা সম্পূর্ণ রাসায়নিক মুক্ত, যা প্লাস্টিক বা থার্মোকলের মতো বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে না। এতে খাবার পরিবেশন করলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমে।
- দৃঢ় ও টেকসই: শালপাতা থেকে তৈরি থালা শক্ত এবং টেকসই হয়। ফলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা যায়।
- বাজার চাহিদা: পূজা-অর্চনা, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাজে এই থালার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্য বিক্রেতারা পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে শালপাতার থালা বেছে নিচ্ছেন।
শালপাতার থালা তৈরির প্রক্রিয়া
শালপাতা সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে তা সেলাই করে থালা বানানো পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে হাতের কাজের উপর নির্ভরশীল। প্রথমে জঙ্গলে গিয়ে উপযুক্ত শালপাতা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই পাতা পরিষ্কার করে রোদে শুকানো হয়। পরে, সুতো বা বাঁশের কাঠি দিয়ে পাতাগুলি সেলাই করে গোল আকৃতির থালা তৈরি করা হয়। অনেক সময় শক্তি বাড়ানোর জন্য একাধিক স্তরের শালপাতা ব্যবহার করা হয়।
অর্থনৈতিক দিক
শালপাতার থালা তৈরির মাধ্যমে বহু আদিবাসী পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন। যদিও এই পণ্যটি শ্রমসাধ্য, তবে এর বিক্রয়মূল্য তুলনামূলক কম। একটি থালা তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম ও সময় লাগে, অথচ স্থানীয় বাজারে তার দাম অত্যন্ত সামান্য। তবে বর্তমানে অনলাইন এবং বিভিন্ন ইকো-ফ্রেন্ডলি পণ্যের দোকানে এই থালার চাহিদা বাড়ছে, যা আদিবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করছে।
সরকারি সহায়তা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এই শিল্পের প্রসারে সাহায্য করছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীও এই কাজে যুক্ত হচ্ছে, যাতে বৃহত্তর বাজার তৈরি করা যায়।
উপসংহার
শালপাতার থালা শুধুমাত্র একটি পণ্য নয়, এটি আদিবাসীদের ঐতিহ্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি একদিকে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও আদিবাসীদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম। সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এই শিল্প আরও বিকশিত হবে এবং আদিবাসী সমাজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।