কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ভারত মহাকাশে সামরিক ক্ষমতা আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে “সামরিক মহাকাশ নীতি” গঠনের পথে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এই নীতি প্রকাশিত হবে বলে জানালেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান।
নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় ভারত ডেফস্পেস সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেনারেল চৌহান জানান,“ডিফেন্স স্পেস এজেন্সি (DSA) একটি সামরিক মহাকাশ নীতির খসড়া তৈরি করছে, যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সামনে আসবে। পাশাপাশি জাতীয় স্তরের সামরিক মহাকাশ নীতিও প্রস্তুত করা হচ্ছে।”
জেনারেল চৌহান বলেন, আমরা এমন এক যুগের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে মহাকাশ পরিণত হচ্ছে যুদ্ধের নতুন ডোমেনে। এ কারণেই দরকার মহাকাশ ভিত্তিক সামরিক কৌশল, গবেষণা এবং স্পেস ওয়ারফেয়ার স্কুল গড়ে তোলার মতো উদ্যোগ। তিনি জানান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নজরদারি ও গোয়েন্দা নজরদারির জন্য ৫২টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে ৩১টি নির্মাণ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। এই উদ্যোগে ISRO ও প্রাইভেট সেক্টরের যৌথ অংশগ্রহণ থাকছে।
একটি ইন্টিগ্রেটেড স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন গ্রিড তৈরির কাজ চলছে, যার মাধ্যমে বর্তমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
CDS চৌহান বলেন,“আমাদের প্রতিপক্ষ দেশগুলির মহাকাশে ক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে। কেউ কেউ মহাকাশে অন-অরবিট ম্যানুভার দেখিয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার তৈরি করছে বিশেষ এয়ারোস্পেস বাহিনী। এই সমস্ত কিছুই আমাদের ঝুঁকি প্রশমনের কৌশলের অংশ হওয়া উচিত।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় শক্তি থেকেও এই ধরনের হুমকি আসতে পারে, যেগুলির উৎস কেবল মহাকাশ নয়, মহাকাশ-নির্ভর প্রযুক্তিতেও ছড়িয়ে পড়ছে।
“মহাকাশ নিয়ে আলোচনা, গবেষণা, আইন, কূটনীতি, সামরিক কৌশল—সবকিছুর উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি ‘স্পেস কালচার’ তৈরি করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র স্টার্টআপ খুললেই হবে না, তৈরি করতে হবে মহাকাশ বিষয়ক জার্নাল, আর্টিকেল, ইনস্টিটিউট ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।”
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিটি সামরিক বাহিনীর জন্য আলাদা মহাকাশ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় থাকা আবশ্যক।
প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ভি আর চৌধুরী (অবসরপ্রাপ্ত) বলেন,“মহাকাশে অস্ত্রায়ন এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, এটি বাস্তব এবং সময়ের অপেক্ষা মাত্র। স্যাটেলাইট ও মহাকাশ সম্পদ ভবিষ্যতে ‘সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি’ হয়ে উঠবে।”
ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত অগ্রগতির জন্য মহাকাশ এখন গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টলাইন। CDS-এর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ভারত এই ক্ষেত্রে আর পিছিয়ে থাকতে চায় না। সামরিক মহাকাশ নীতি ও নব্য স্পেস কালচার গঠনের মাধ্যমে ভারত তার মহাকাশ ক্ষমতা মজবুত করার দিকে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে।