কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ফাল্গুন-চৈত্র মানেই সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে শুরু হয় মধু সংগ্রহের মরসুম। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও পেশাগত দায়বদ্ধতায় এ সময় জঙ্গলে প্রবেশ করেন সুন্দরবনের মধু সংগ্রাহকরা, যাঁদের স্থানীয়ভাবে ‘মৌলে’ বলা হয়। এ বছরের মধু সংগ্রহ অভিযানের জন্য রাজ্যের বনদপ্তর মঙ্গলবার কুলতলি বিট অফিস থেকে মোট ৫৫টি দলকে ছাড়পত্র দিয়েছে।
প্রত্যেক দলে ৫ থেকে ৭ জন মৌলে রয়েছেন। বনদপ্তর আশাবাদী, এবারে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ১০ টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
মৌলেরা বছরের নির্দিষ্ট এই সময়েই জঙ্গলে যান। হেঁতাল, খলসে-সহ বিভিন্ন গাছে ফুল ফোটার পরে মৌমাছিরা চাক তৈরি করে এবং মধু জমে ওঠে। মূলত ফাল্গুন, চৈত্র এবং বৈশাখ এই তিন মাসই মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। এই সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় মধু গাঢ় হয় এবং মৌচাক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও কম থাকে।
জঙ্গলে যাওয়ার আগে মৌলেরা মা বনবিবির পুজো দেন। এরপর ১০-১৫ দিনের খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে থাকে বড় দা বা হেসো, ছোট কাটার দা, জাল, হাড়ি-বালতি, প্লাস্টিক বা টিনের ড্রাম, খড়, দড়ি, গামলা এবং সুরক্ষার জন্য মুখোশ। জোয়ারের সময় জলপথে তাঁরা জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করেন এবং গোপন চেনা পথে মধু সংগ্রহের স্থানে পৌঁছান।মৌলেদের এই ১৫ দিনের অভিযানের সময় তাঁদের পরিবার, বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা উপবাস পালন করেন। যতক্ষণ না মৌলেরা সুস্থভাবে বাড়ি ফেরেন, ততদিন তাঁদের পরিবারের কেউ মাছ-মাংস বা শাকসবজি দিয়ে রান্না করেন না। শুধুমাত্র পান্তা ভাত খেয়ে দিন কাটান তাঁরা।
বনদপ্তরের নির্ধারিত দামে, উৎকৃষ্ট মানের মধু প্রতি কেজি ২৭৫ টাকা এবং নিম্নমানের মধু ২৪০ টাকা দরে কেনা হবে। এই মধু রাজ্য সরকার পরিচালিত ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট কর্পোরেশন কিনে নেয় এবং শোধনের পরে ‘মৌবন’ ব্র্যান্ডে বাজারে বিক্রি করে। কর্পোরেশনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত মধু বনদপ্তরের তত্ত্বাবধানে অন্যত্র বিক্রি করা হবে।
মঙ্গলবার ছাড়পত্র বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন বনদপ্তরের ডিরেক্টর, জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিএফও নিশা গোস্বামী, ও এডিএফও অনুরাগ চৌধুরী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত দিকগুলো নিয়েও সচেতনতা তৈরি করা হয়।
মৌলেদের এই সাহসিক অভিযান শুধু তাঁদের জীবিকা নয়, সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।