কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সতর্ক বার্তা পাঠাল ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগ !
বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই (DGFI) প্রধান মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি স্পেন সফরে গিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI)-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকায় কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা স্তরে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে দিল্লিতে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই ঘটনাকে “উচ্চ সতর্কতা সূচক” হিসেবে চিহ্নিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে (MEA) একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস-এর ব্যাংককে সদ্যসমাপ্ত আলোচনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডিজিএফআই প্রধান জাহাঙ্গীর আলম স্পেনের মাদ্রিদে পৌঁছান, যেখানে তিনি স্পেনের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা CNI আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন।
এই সম্মেলনে পাকিস্তানের আইএসআই এবং তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা MIT-এর প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করে। ভারতের কোনো প্রতিনিধি এই সম্মেলনে না থাকায় গোয়েন্দা মহলে বিষয়টি আরও সন্দেহজনক হয়ে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সফরটি ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল, এমনকি সংস্থার অভ্যন্তরেও অনেকে জানতেন না যে জাহাঙ্গীর আলম দেশের বাইরে যাচ্ছেন।
আলমের সঙ্গে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেহেদি হোসেন কবীর, যিনি ডিজিএফআই-এর কাউন্টার টেররিজম ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান, এবং আরও দুজন জুনিয়র অফিসার। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি উপদেষ্টা ও MIT প্রধান ইব্রাহিম কালিন-এর সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পেছনে আইএসআই-এর গোপন ভূমিকা থাকতে পারে বলে সন্দেহ। এই অভিযোগ জোরাল হয় যখন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তিনজন উচ্চপদস্থ আইএসআই অফিসার ঢাকায় সফর করেন এবং রংপুর সহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একাধিক সংবেদনশীল এলাকায় পরিদর্শন চালান। উল্লেখ্য, রংপুর ভারতের সিলিগুড়ি করিডরের একেবারে সন্নিকটে অবস্থিত, যা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল।
এর আগেই, ১৩–১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামর-উল-হাসান পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি সফরে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি করাচির নৌবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ও জাহাজ নির্মাণ ঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এছাড়া ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের সহিংস আন্দোলনের সময় তুরস্ক থেকে আসা ছোট আকারের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশে পাচার করা হয়েছিল, যা ওই সহিংসতায় ব্যবহৃত হতে পারে।
পসাপসী এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পাকিস্তান ও তুরস্কের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ ভারতের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দেওয়া রিপোর্টে স্পেনে ভারতের গোয়েন্দা সম্পদ মোতায়েন করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে জাহাঙ্গীর আলমের কার্যকলাপ ও তার আইএসআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের উপর নজর রাখা যায়।
এই ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক চিত্রে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সামরিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অবস্থান ভারত-সহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক চিন্তার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।