কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) লোকসভা ইউনিটের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ এবার প্রকাশ্যে এল হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ঘিরে। এক মহিলা সাংসদ অভিযোগ করেছেন, দলের এক প্রবীণ সহকর্মী তাঁকে বিদ্রূপ করেছেন। এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিজেপি সেই বিতর্কের স্ক্রিনশট প্রকাশ করে, দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে সামনে নিয়ে এসেছে। এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর দলের ঐক্য রক্ষার চাপ আরও বাড়ল।
তৃণমূলের এক মহিলা সাংসদ দলের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন এবং দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এক প্রবীণ সাংসদ তাঁকে ব্যঙ্গ করে “ইন্টারন্যাশনাল লেডি” বলে সম্বোধন করেছেন।
বিজেপির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য মঙ্গলবার সকালে X (টুইটার)-এ হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। সেখানে তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নতুন নির্বাচিত সাংসদ কীর্তি আজাদ-এর মধ্যে উত্তপ্ত কথোপকথন দেখা যায়।
অমিত মালব্য স্ক্রিনশটের সঙ্গে লিখেছেন:
“এই বহু প্রতিভাধারী ইন্টারন্যাশনাল লেডি কে?”
যা সরাসরি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিদ্বেষকেই উস্কে দেয়।
যদিও এই স্ক্রিনশটের সত্যতা এখনও যাচাই হয়নি এবং দলীয়ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি, তবুও তৃণমূলের অন্দরে এই বিতর্ক রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিলা সাংসদের অভিযোগপত্র মঙ্গলবার সকালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।
দলীয় একাধিক সূত্রের দাবি, এ ধরনের অপমানমূলক মন্তব্য অতীতে আরও একাধিক মহিলা সাংসদের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে ওই একই প্রবীণ সাংসদের তরফে।
একবার তো নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আলোচনার সময়ে, ওই সাংসদ এক সহকর্মীকে ‘কোটা এমপি’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন।
প্রবীণ সাংসদের সমর্থকদের দাবি, অভিযুক্ত মহিলা সাংসদই প্রথমে বিতর্কের সূচনা করেন এবং ঘটনাটিকে অযথা বড় করে তুলে দলের নেতৃত্ব পর্যন্ত নিয়ে যান।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, দলের রাজ্যসভার ইউনিট এখনো পর্যন্ত অক্ষত থাকলেও, লোকসভার শাখায় গভীর বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, নতুন এক সাংসদ লোকসভা ক্যান্টিনে চিত্তরঞ্জন পার্কের একটি জনপ্রিয় মিষ্টির দোকানের শাখা খোলার পক্ষে সই সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। তারই খসড়া চিঠি দলের অন্যান্য সাংসদের কাছে পাঠানো হয়।
এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে এক প্রবীণ সাংসদ বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। পরে দলের তরফে একটি হুইপ জারি করে বলা হয়, কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত উদ্যোগে সাংসদরা সই করতে পারবেন না। অভিযুক্ত মহিলা সাংসদ হুইপের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের সমর্থন প্রত্যাহার করেন।
এরপর থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে উত্তেজনা চরমে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত ওই মহিলা সাংসদ গ্রুপ ত্যাগ করেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বিতর্কিত ওই প্রবীণ সাংসদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অপরদিকে, অভিযোগকারী মহিলা সাংসদ সদ্য লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং সদ্য একজন হাই-প্রোফাইল বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে নিজের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেছেন।
অন্যদিকে নবনিযুক্ত এক রাজ্যসভার সাংসদ মন্তব্য করেন,
“লোকসভার এই চ্যাট গ্রুপ তো কলেজের ছাত্রদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মতো হয়ে গেছে। পাল্টা কটাক্ষ, মীম—সবই দলীয় ঐক্যের অভাবই স্পষ্ট করছে।”
বিজেপি এই বিতর্ককে সামনে এনে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে তৃণমূলের উপর। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিভাবে এই দলীয় বিভাজন সামাল দেন, সেটাই আগামী দিনে দেখার বিষয়।