নিজেস্ব সংবাদদাতা ,শিলিগুড়ি:
শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। পাহাড়, ডুয়ার্স, সিকিম, এমনকি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিক থেকেও এই শহরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রতিদিন এই শহরের রাস্তায় ছোট-বড় সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু পরিকল্পনার অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং অসংগঠিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ শহর দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ যানজট সমস্যায় জর্জরিত।
যানজট সমস্যার প্রধান কারণ:
-
বেসিন-মুক্ত রোড নেটওয়ার্ক: শহরের মূল রাস্তা যেমন সেবক রোড, হিল কার্ট রোড, বার্জার পয়েন্ট, ধর্মা মোড় – সব জায়গাতেই নিরবিচারে যানবাহনের চাপ। অথচ কোনও বিকল্প বাইপাস বা রিং রোড নেই।
-
অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা চলাচল: শহরের ভেতরে অটোর সংখ্যা অনেক বেশি এবং নির্দিষ্ট রুট ছাড়াও চলাচল করে, যা ট্রাফিক জ্যামে বড় ভূমিকা রাখে।
-
অব্যবস্থাপনায় ভরা পার্কিং: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গন্তব্যের পাশে অবৈধ পার্কিং বা দখলদারি ট্রাফিক প্রবাহকে আটকে দেয়।
-
পর্যাপ্ত বাস টার্মিনালের অভাব: দূরপাল্লার বাসগুলো এখনও শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে, যেটা শহরের ভেতরের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধান:
-
বাস টার্মিনালের পুনর্বিন্যাস: তিনবাত্তি টার্মিনাল চালু হলে শহরের ভিতরে বাস প্রবেশ অনেকটাই কমবে।
-
নতুন বাইপাস নির্মাণ ও পুরনো রাস্তাগুলোর চওড়া করা।
-
অটো ও টোটো চলাচলের ক্ষেত্রে ‘রুট নির্দিষ্টকরণ’ ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন।
-
ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল এবং ‘ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (ITMS) চালু করা।
-
বাস্তবায়নযোগ্য ‘পার্কিং পলিসি’ ও মাল্টিলেভেল পার্কিং স্থাপন।
-
নাগরিক সচেতনতা ও ট্রাফিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোরতা।
শহর উন্নয়নের কথা বললে শুধুই রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য নয়, মূল চাবিকাঠি হলো সময় ও গতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। শিলিগুড়ির প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিলে আগামী দিনে যানজটমুক্ত শহর গড়ার স্বপ্ন আর অধরা থাকবে না।
আর এই নিয়েই শহরের দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হলেন শিলিগুড়ি পৌরনিগম। বুধবার শিলিগুড়ি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনে ট্রাফিক সংক্রান্ত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন মেয়র গৌতম দেব। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, ট্রাফিক ডিসিপি বিশ্বচাঁদ ঠাকুর, সহ পৌর আধিকারিক ও পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিশেষত, তিনবাত্তি বাস টার্মিনালকে দ্রুত কার্যকরী করে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসগুলিকে ওই টার্মিনালে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে শহরের কেন্দ্রস্থলে যানচলাচল কমে এবং যানজট অনেকাংশে হ্রাস পায়।
এছাড়াও শহরের ট্রাফিক লেন পুনর্বিন্যাস, অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণ, নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং ব্যবস্থা উন্নয়ন সহ অন্যান্য নানা বিষয়ে আলোচনা হয় বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
মেয়র গৌতম দেব জানান, “শহরের যানজট সমস্যা নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বাস টার্মিনাল ও বিকল্প ট্রাফিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চাই।”
শিগগিরই নেওয়া সিদ্ধান্তগুলিকে বাস্তবায়নের পথে হাঁটবে পৌর প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগ।