কলকাতা টাইমস নিউজ : নিজস্ব প্রতিবেদন:
রাজ্যজুড়ে বেকার ও আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিবাদের মাঝে পুলিশি লাঠিচার্জের অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (ADG), আইন ও শৃঙ্খলা, জাওয়েদ শামীম সমস্ত জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন—শিক্ষকদের ওপর কোনো অবস্থাতেই বলপ্রয়োগ নয়, পরিস্থিতি সামলাতে হবে সংলাপের মাধ্যমে।
এই নির্দেশের পাশাপাশি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান—”আমরা আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটান বা নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেন। রাজ্য সরকার বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের এক পুলিশ সুপার বলেন, “আমাদের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—শিক্ষকদের কোনও কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ নয়। সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।”
এই নির্দেশ আসে দক্ষিণ কলকাতার কসবার ঘটনার পরপরই, যেখানে আন্দোলনরত শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন, তখনই পুলিশ লাঠিচার্জ করে। শুধু কসবা নয়, দুর্গাপুর (পশ্চিম বর্ধমান) এবং বারাসাত (উত্তর ২৪ পরগনা) থেকেও অনুরূপ অভিযোগ উঠে এসেছে। একাধিক বেকার শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পাল্টা অভিযোগও রয়েছে—কিছু পুলিশ কর্মীও ইটের ঘায়ে আহত হন।
ঘটনার জেরে কসবা বিক্ষোভের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে এক পুলিশ অফিসারকে এক শিক্ষককে লাথি মারতে দেখা যায়। কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বিক্ষোভের আগাম কোনও তথ্য ছিল না। তবে ভিডিওতে যেটা দেখা গেছে, সেটি কোনওভাবেই একজন পোশাকধারী পুলিশ কর্মীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে।”
ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। রাজ্যের একাধিক জেলায় আন্দোলন ও পুলিশের মধ্যে কার্যত ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করে দেয়। সেই রায়ের পর থেকেই আন্দোলন জোরদার হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার এক সভায় আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দেন, অনেকেই আশ্বস্ত হননি। তাঁরা অভিযোগ তোলেন—অযোগ্যদের ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে এবং প্রকৃত যোগ্যদের থেকে তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে জাওয়েদ শামীমের নির্দেশে প্রশাসনের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। সংলাপ ও সহনশীলতার পথে হেঁটে প্রশাসন এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এবং আরও সংঘাত এড়ানোর পথেই হাঁটছে।