কলকাতা টাইমস নিউজ :আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
বাংলাদেশে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিচালনার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এডিসি (ADC)-সহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাঁচজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গৃহবন্দি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত এই আন্দোলন ঘিরেই তাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে গত ৫ এপ্রিল পাঁচজন কর্মকর্তাকে তাদের সরকারি বাসভবনে ‘হাউস অ্যারেস্ট’-এ রাখা হয়। এই ঘটনার পরদিনই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় সরকারি সফরে রওনা দেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA)-কে পাঠানো একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই পাঁচজনের পরিচয় জানানো হয়েছে। তারা হলেন—
-
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস. এম. জাকারিয়া হোসেন (ইঞ্জিনিয়ার্স ব্রিগেড)
-
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ (ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড ও শেখ হাসিনার প্রাক্তন ADC)
-
কর্নেল আবদুল্লাহ আল-মোমেন (র্যাব)
-
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদওয়ানুল ইসলাম (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)
-
মেজর মোহাম্মদ নোমান আল ফারুক (ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট)
একজন এমইএ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং সব ধরনের কার্যকর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা দেশ ছাড়ার অনুমতিও পাচ্ছেন না।”
সূত্রের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে সেনাপ্রধান জেনারেল জামান এই পদক্ষেপ অনুমোদন করেন। শুরুতে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক থাকলেও ICT কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে সেনাপ্রধান এই গ্রেপ্তার অনুমোদন করেন।
এই কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ বাসভবনে থাকলেও কার্যত ‘ওপেন অ্যারেস্ট’-এর আওতায় রয়েছেন। তাদের গতিবিধি সীমিত, এবং তারা পূর্বের কোনও পদের দায়িত্বে আর নেই।
এদিকে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী মাসগুলোতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৬২৭ জন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার সদস্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এ নিয়ে সামরিক ও বেসামরিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনো এই পাঁচ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোর্ট অব ইনকোয়ারি (Court of Inquiry) শুরু হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় নথি সামরিক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করার পরই বিচার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
এই পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ছাত্র আন্দোলন-পরবর্তী সংকট সামাল দিতে সক্রিয়ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে।