কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা:
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের জেরে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ যেমন বেড়েছে, তেমনি আইনি জটিলতাও আরও গভীর আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য নিয়ে তাঁকে আদালত অবমাননার নোটিস ধরালেন দিল্লিভিত্তিক আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত।
গত বৃহস্পতিবার ওই আইনজীবী মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার অভিযোগে আনুষ্ঠানিক নোটিস পাঠান। নোটিসে বলা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক—তা কেন্দ্র বা রাজ্য, বা যে কোনও জনপ্রতিনিধি হোন না কেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে নাকি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, তিনি সেই রায় বাস্তবায়নে অনিচ্ছুক।
গত ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এসএসসি প্রার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি এই রায় মানতে পারি না। কেউ কারও চাকরি কেড়ে নিতে পারে না। আমাদের পরিকল্পনা আছে—এ, বি, সি, ডি, ই। হ্যাঁ, এই কথা বলার জন্য আমায় জেলে পাঠানো হতে পারে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
এই মন্তব্যকেই আদালতের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী দত্ত। তাঁর দাবি, যদি মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হবে।
অন্যদিকে নোটিসের জবাবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আইন ও আদালতের প্রতি রাজ্য সবসময় শ্রদ্ধাশীল এবং ভবিষ্যতেও আইনের পরিকাঠামোর মধ্যেই কাজ করবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পান্ত স্পষ্ট করে বলেন, “সরকার কখনোই শীর্ষ আদালতের আদেশ অমান্য করার কথা বলেনি। বরং, আইনি পরামর্শ নিয়েই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করছি।”
পাশাপাসি তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই নোটিসকে “রাজনৈতিক চক্রান্ত” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা জনপ্রিয়তার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছেন, তাঁরা এখন আইনি পথে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন।” তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল, তবে বৃহৎ জনস্বার্থে কোনও রায় যদি জনজীবনে কষ্ট ডেকে আনে, তাহলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার একজন জনপ্রতিনিধির থাকা উচিত।
তিনি কিছু বিচারপতির অবসরের পর রাজনৈতিক যোগদানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে প্রশ্ন তোলেন—এই ধরণের রায় কি সর্বতোভাবে নিরপেক্ষ?
অপরদিকে সেই একই সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনেক প্রার্থী সোনার মেডেল পেয়েছেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের চোর, অযোগ্য বলা হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে এসব বলা হচ্ছে? আমি সরাসরি এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে।
এই ঘটনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে একটি নতুন আবেদন দাখিল করেছে, যেখানে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে বর্তমানে যাঁরা কর্মরত আছেন, তাঁদের চাকরির উপর স্থিতাবস্থা চাওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝখানে পড়ে রয়েছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী, যাঁদের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে আদালতের পরবর্তী রায় ও সরকারের পদক্ষেপের উপর। আগামী ১৭ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য।