কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী :
একটি প্রশ্ন বাতাসে ওড়ে বেড়াচ্ছে—যদি প্রতিটি উত্তরপত্রের ছায়া থাকে, তবে কীভাবে ধান ও কঙ্কর আলাদা করা যায় না? কেন সেই ছায়ার মুখোশ খুলে সত্যকে দেখা হলো না আদালতে? কেন লক্ষ লক্ষ স্বপ্ন এক ঝটকায় টুকরো টুকরো হয়ে পড়লো হাওয়ায়?
এসএসসি ২০১৬-এর নিয়োগ-কাণ্ডে ঠিক যখন হতাশার কুয়াশা ঘন হয়ে আসছে, সেই সময় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যেন আলো নিয়ে এলেন এক নতুন পথে। শুক্রবার, একদল চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের শেষে তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো এক আশাবাদের বার্তা—“২২ লক্ষ ওএমআর শিটের ‘মিরর কপি’ আমাদের কাছে আছে। প্রকাশ করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
এই ঘোষণায় ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের ৩ এপ্রিলের রায়, যেখানে বলা হয়েছিল—যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব নয়, তাই বাতিল করা হল গোটা প্যানেল। কিন্তু এখন যখন শোনা যাচ্ছে যে প্রতিটি শিটের প্রতিচ্ছবি অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছে, তখন নতুন করে প্রশ্ন উঠছে—তবে কি সেই সত্য লুকোনো ছিল? নাকি দেখানো হয়নি?
ব্রাত্য বসু অবশ্য সতর্ক। বলেন, “এই বিষয়টি বিচারাধীন। তাই আইনগত পরামর্শ নিয়েই এগোতে হবে।”
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি ছিল—একটি স্পষ্ট তালিকা প্রকাশ করা হোক, যেখানে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করে দেখানো থাকবে। শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে এবং আইনি ছাড়পত্র পেলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই তা এসএসসি-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে।
অন্যদিকে বিরোধীদের প্রশ্ন—যদি তালিকা ছিল, তবে তা আগে আদালতে উপস্থাপন করা হল না কেন? মন্ত্রীর জবাব—“এসএসসি-র হার্ডডিস্ক বহু আগেই হারিয়ে গিয়েছিল, তবে সিবিআই-এর হাতে যে তালিকা এসেছিল, তা তিনবার আদালতে পেশ করা হয়েছে। এবারও সেটাই প্রকাশ করা হবে।”
একইসাথে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, বর্তমানে এসএসসি-র চেয়ারম্যান এই ঘটনার জন্য দায়ী নন, কারণ সেই সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না।
অপরদিকে এখন রাজ্য সরকার এবং এসএসসি দু’পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে চলেছে। প্রশ্ন উঠছে—এই তথাকথিত ‘মিরর ডেটা’ আদৌ কি অতীতের রায়কে পাল্টে দিতে পারে? যদিও মন্ত্রী এই বিষয়ে মুখ খোলেননি, তবে তাঁর কথায় ভেসে এল এক গভীর প্রত্যয়—“যাঁরা সত্যিই যোগ্য, তাঁদের চাকরি ফেরাতে রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত লড়বে।”
যদিও আসন্ন ১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য। সেই প্রেক্ষিতে ব্রাত্য বসুর কণ্ঠে যেন রাজনৈতিক বার্তার পাশাপাশি শোনা গেল এক মানবিক আকুতি—“যারা নিজে ভাত দেয় না, তারা যেন আবার অভিযোগ না তোলে খিদের জন্য। আমরা শেষ মুহূর্তে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদের বাঁচাতে চেষ্টা করছি—দয়া করে সেই প্রয়াসে বাধা সৃষ্টি করবেন না।”
এই নাটকীয় ঘটনার মাঝেও, অনিশ্চয়তা আর আশা হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলেছে বাংলার হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর জীবনে। সময় বলবে, এই ‘মিরর শিট’-এর প্রতিচ্ছবিতে সত্যের মুখ দেখা যাবে কি না। আপাতত, চাহনির কেন্দ্রে একটাই তারিখ—১৭ই এপ্রিল।