কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিনিধি:
সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ আগামী বুধবার (১৭ এপ্রিল) বহুল বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে একাধিক আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে চলেছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কে ভি বিশ্বনাথন-সহ তিন সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি করবেন।
প্রসঙ্গত, এই আইনটি ৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার পর। এর আগে লোকসভায় ২৩২ এবং রাজ্যসভায় ১২৮ জন সাংসদের সমর্থনে এই আইন পাস হয়। আইনটির উপর সংসদে ব্যাপক বিতর্ক হয়, বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর প্রবল আপত্তি দেখা যায়।
এই সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কংগ্রেস, ডিএমকে, আম আদমি পার্টি, সিপিআই, ওয়াইএসআরসিপি, এআইএমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এবং অভিনেতা-রাজনীতিবিদ বিজয়সহ একাধিক নেতা ও দল সুপ্রিম কোর্টে পৃথক পৃথক পিটিশন দাখিল করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই আইন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে।
AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি এই আইনটিকে “মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার ও সংবিধান বিরোধী” বলে অভিহিত করেছেন এবং পৃথক আবেদন করেছেন। ডিএমকে সরকারের পক্ষ থেকেও আদালতে জানানো হয়েছে, এই আইন শুধুমাত্র তামিলনাড়ুর প্রায় ৫০ লাখ মুসলমানই নয়, বরং সারা দেশের ২০ কোটিরও বেশি মুসলমানদের অধিকার হরণ করছে। এর আগে তামিলনাড়ু বিধানসভায় এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।
এই আইনের বিরোধিতায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড ও অন্যান্য সিভিল সোসাইটি সংগঠনও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে, যারা আইনটিকে “একতরফা” ও “সংবিধানবিরোধী” বলে দাবি করছে।
অন্যদিকে, ছয়টি বিজেপি শাসিত রাজ্য— রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড প্রমুখ — এই আইনকে সমর্থন করে সুপ্রিম কোর্টে তাদের পক্ষে বক্তব্য রাখার আবেদন জানিয়েছে। উত্তরাখণ্ড ওয়াকফ বোর্ড এই আইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে আদালতে জানিয়েছে, এটি ইতিহাসগত ভুল সংশোধনের একটি পদক্ষেপ এবং তা সমাজের জন্য উপকারী।
রাজস্থানের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারও একটি আবেদনে জানিয়েছে, এই আইন “স্বচ্ছ ও সংবিধানসিদ্ধ”। তবে আইনটির বিরোধিতায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে, যেখানে গত সপ্তাহে সংঘর্ষে তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “এই সংশোধনী আইন প্রণয়নের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে কেউ অন্যের জমি জোরপূর্বক কিংবা একতরফাভাবে দখল করতে না পারে।” তিনি আরও বলেন, “পূর্বের ওয়াকফ আইন ওয়াকফ বোর্ডকে অপ্রতিম ক্ষমতা দিয়েছিল, যার কারণে সংশোধনের প্রয়োজন ছিল।”
উল্লেখ এই শুনানিটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আদালত পূর্বে একটি মামলায় স্পষ্টভাবে বলেছিল, বিচার বিভাগ সংসদকে আইন প্রণয়নে কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ দিতে পারে না। বিচারপতি বি আর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছিল, “হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট কোনও আইনের খসড়া তৈরি বা তা কোনভাবে প্রণয়ন করতে হবে তা নির্দেশ দিতে পারে না।”
এই মামলায় প্রায় ১০টি পিটিশনের শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে, যা ভারতের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠতে চলেছে।