কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
ভারতের বিচারব্যবস্থার মান ও কার্যকারিতা নির্ধারণে ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২৪’-এ আবারও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো শীর্ষস্থান দখল করেছে। কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কেরালা ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলো চারটি মূল সূচকে এগিয়ে থেকে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে, বড় ও মাঝারি আকারের ১৮টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিচারব্যবস্থার দিক থেকে সবার নিচে অবস্থান করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্ণাটক পেয়েছে ১০-এর মধ্যে ৬.৭৮ স্কোর, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের স্কোর মাত্র ৩.৬৩। আগের প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্থানে ছিল, এবার আরও নিচে নেমে গেছে। অন্যদিকে, তেলেঙ্গানা ২০২২ সালে ১১তম স্থান থেকে এবার লাফ দিয়ে উঠে এসেছে ৩য় স্থানে।
২০১৯ সালে টাটা ট্রাস্টস-এর তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া এই প্রতিবেদনটি বিচারব্যবস্থার চারটি খাতে রাজ্যগুলোর অগ্রগতি ও ঘাটতি মূল্যায়ন করে — পুলিশ, জেল, বিচার বিভাগ এবং আইনি সহায়তা। এ বছরের রিপোর্টে চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ ছোট রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিকিম, আর সবচেয়ে নিচে রয়েছে গোয়া।
বিভিন্ন স্তরে অগ্রগতি ও দুর্বলতা
-
পুলিশ বিভাগে বিহার সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখিয়েছে। তবে এখানেই সবচেয়ে কম পুলিশ-জনসংখ্যা অনুপাত দেখা গেছে — প্রতি লক্ষ লোকের জন্য মাত্র ৮১ জন পুলিশ, যেখানে জাতীয় গড় ১৫৫ এবং অনুমোদিত সংখ্যা ১৯৭.৫।
-
বিচার বিভাগের কার্যকারিতায় রাজস্থান, কেরালা এবং মধ্যপ্রদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি দেখিয়েছে।
-
কারাগার ব্যবস্থাপনায় ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড নেতৃত্ব দিয়েছে।
-
আইনি সহায়তা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অগ্রগতি করেছে হরিয়ানা।
প্রতিবেদনটি আরও জানিয়েছে, গত এক দশকে ভারতের কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে আসামির সংখ্যাও ৬৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা বিচারাধীনদের ওপর অতিরিক্ত চাপ ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতাকে নির্দেশ করে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিচার বিভাগে বরাদ্দ বাজেটের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র বেতনেই ব্যয় হয়। ফলে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ হয় না, যা সার্বিক বিচার পরিষেবার গুণমানকে প্রভাবিত করে।
অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সঞ্জয় কিশন কৌল এই প্রতিবেদনের ভূমিকায় লিখেছেন, “এই ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।” তিনি বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে নেতৃত্ব বিকাশ এবং সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে, তিনি সমাজের পক্ষ থেকেও বিচার সংস্কারকে একটি “সামাজিক দাবিতে” পরিণত করার তাগিদ দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র বিচারব্যবস্থার একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নয়, বরং ভারতের প্রতিটি রাজ্য ও প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা এবং পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান।