কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
এই বছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বৃষ্টিপাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিল ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD)। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই মৌসুমটি দেশের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি, কারণ দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী এবং মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল।
পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব এম রবিচন্দ্রন শুক্রবার এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, এই বছরের মৌসুমী বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদী গড়ের (৮৭ সেন্টিমিটার) ১০৫ শতাংশ হতে পারে, যার প্রান্তিক ত্রুটি ±৫ শতাংশ। আবহাওয়া দফতরের মতে, এই পরিমাণ বৃষ্টিপাতকে ‘স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি’ (Above Normal) হিসেবে ধরা হয়।
যেসব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি, যেসব অঞ্চলে কম
এই বছর মহারাষ্ট্রের মারাঠওয়াড়া ও তেলেঙ্গানার কিছু অংশ, যা বিগত বছরগুলোতে বৃষ্টির ঘাটতির মুখে পড়েছিল, সেখানে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। অপরদিকে, তামিলনাড়ু ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমডি। জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, বিহার ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও কম বৃষ্টি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
মূল কৃষিপ্রধান রাজ্যগুলিতে আশার সম্ভাবনা
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিক থেকে কিছুটা বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলগুলিকেই ‘মূল মৌসুমী কৃষি অঞ্চল’ (core monsoon zone) হিসেবে ধরা হয়, যেখানে সেচব্যবস্থার তুলনায় বর্ষার উপর নির্ভরশীলতা অনেক বেশি।
আন্তর্জাতিক প্রভাব ও বৈশ্বিক অবস্থা
আবহাওয়া দফতরের মহাপরিচালক মৃতুঞ্জয় মহাপাত্র জানান, মৌসুমী বৃষ্টিপাতে প্রভাব ফেলে এমন তিনটি প্রধান আন্তর্জাতিক জলবায়ু উপাদানের মধ্যে দুটি নিরপেক্ষ প্রভাব ফেলবে এবং একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাঁর মতে, এই মৌসুমে ৩০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের, ৩৩ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এবং ২৬ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে অতিবর্ষণের (excess rainfall)।
চ্যালেঞ্জের মুখে আবহাওয়া, আশার আলো কৃষিতে
যদিও এই পূর্বাভাস দেশের কৃষকদের জন্য আশাব্যঞ্জক, তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে বর্ষাকালের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক হলেও তা সবসময় সময়ে ও অঞ্চলে সমানভাবে বিতরণ হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির ধরণ ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির দিন কমে এলেও হঠাৎ ভারী বর্ষণের ঘটনা বাড়ছে, যার ফলে অনেক সময়ই একই সঙ্গে বন্যা ও খরার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
তীব্র গরমের মাঝে আশার খবর
এদিকে, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে তীব্র গরম এবং আরও বেশি সংখ্যক হিটওয়েভ (তাপপ্রবাহ) দিনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
তবে এই মৌসুমী বৃষ্টির ইতিবাচক পূর্বাভাস কৃষক, নীতিনির্ধারক এবং সমগ্র অর্থনীতির জন্যই স্বস্তির খবর। আগামী কয়েক মাসে বর্ষার গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা হবে খুব ঘনিষ্ঠভাবে, কারণ দেশের কৃষি ভবিষ্যৎ অনেকটাই এর উপর নির্ভরশীল।