কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন:
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলায় কেন্দ্রীয় সরকার বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে জানায়, তারা বিষয়টির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও প্রাসঙ্গিক নথিপত্র জমা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় চায়। দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেন, “এই আইনটি সুপরিকল্পিত এবং বহু প্রতিনিধিত্বমূলক মতামতের ভিত্তিতে গঠিত। তাই আইনটি পুরোপুরি স্থগিত রাখা অনুচিত হবে। আমরা বিস্তারিত জবাব দাখিল করব আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে।”
ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি পি ভি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ এদিন স্পষ্ট করে দেয় যে, বর্তমানে ওয়াকফ আইন পুরোপুরি স্থগিত করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে, আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত ওয়াকফ বোর্ড বা কাউন্সিলে কোনও নতুন নিয়োগ করা যাবে না।
আদালত আরও জানায়, যেসব সম্পত্তিকে ‘ওয়াকফ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—তা ব্যবহারকারী, ঘোষণাপত্র বা নথিভুক্তির মাধ্যমে হোক না কেন—সেগুলিকে এখনই নতুন করে শনাক্ত বা ‘ডি-নোটিফাই’ করা যাবে না।
আলোচনার সময় প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “সরকার আইন বদলে ইতিহাস পুনরায় লিখতে পারে না। অতীতে আদালতের ঘোষণায় যেসব সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলি এখন আবার ওয়াকফ নয় বলে ঘোষণা করা যায় না।”
এছাড়া, তিনি জানান, “কালেক্টর তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন, তবে সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী প্রভাবিত সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর হবে না। প্রয়োজনে কালেক্টর আদালতের অনুমতি চাইতে পারেন।”
আদালত এই বিষয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশনা দেয় যে, বোর্ড ও কাউন্সিল গঠনের সময় কেবলমাত্র মুসলিম সদস্যদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিত, যদিও প্রাক্তন পদের (ex-officio) সদস্য হিসেবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা নিযুক্ত থাকতে পারেন।
বুধবারের শুনানিতে আদালতের ইঙ্গিত
এর আগের দিন, বুধবার, প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানির পর আদালত ইঙ্গিত দেয় যে তারা ওয়াকফ আইনের কিছু বিতর্কিত ধারা, যেমন:
-
বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি,
-
কালেক্টরের বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষমতা,
-
আদালতের মাধ্যমে ঘোষিত ওয়াকফ সম্পত্তিগুলিকে ‘ডি-নোটিফাই’ করার বিধান—
এইসবের উপর আংশিক স্থগিতাদেশ দিতে পারে।
তবে কেন্দ্রের আইনজীবী ও আইনটির সমর্থনে উপস্থিত অন্যান্য পক্ষ দাবি করে যে, আন্তর্বর্তীকালীন রায় দেওয়ার আগে তাদের বক্তব্য শুনে নেওয়া হোক। আদালত এই দাবি মেনে নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেয়।
এই মামলার উপর শুধু মুসলিম সম্প্রদায় নয়, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনও নজর রেখেছে। কারণ, ওয়াকফ আইন ঘিরে জমি সংক্রান্ত বহু বিতর্ক রয়েছে। সরকারের ভূমি শ্রেণিবিন্যাস ও প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ ও ‘ডিক্লারেশন’-এর মাধ্যমে চিহ্নিত সম্পত্তি নিয়ে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট লক্ষ্য হলো, কোনও পক্ষের প্রতি অবিচার না করে আইন ও সংবিধানের আলোকে ভারসাম্যপূর্ণ অন্তর্বর্তী নির্দেশনা জারি রাখা। মামলার পরবর্তী শুনানিতে এই আইনের ভবিষ্যত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।