কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিবেদন:
“এখন দেখা যাচ্ছে বিচারপতিরা আইন প্রণয়ন করছেন, প্রশাসনিক ভূমিকাও নিচ্ছেন, এমনকি সংসদের ওপরেও কর্তৃত্ব করছেন।” — উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বৃহস্পতিবার এক শক্ত প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের সমালোচনা করেন, যেখানে রাষ্ট্রপতিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্যপালের প্রেরিত বিলগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ধনখড় মনে করেন, এই রায় দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর মৌলিক ভিত্তির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ।
রাজ্যসভার শিক্ষানবিশদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “এই দেশ কোথায় চলেছে? এখন দেখা যাচ্ছে বিচারপতিরা আইন তৈরি করছেন, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন এবং ‘সুপার পার্লামেন্ট’-এর মতো আচরণ করছেন। অথচ তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই!”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির মতো একজন সংবিধানগত স্তম্ভকে আদালতের পক্ষ থেকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ধরনের নির্দেশ বিচারব্যবস্থার সীমার বাইরে পড়ে। গণতন্ত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করাই মূল চাবিকাঠি।”
গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো রায় দেয় যে, কোনও রাজ্যপাল যদি একটি বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠান, তবে রাষ্ট্রপতিকে সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিন মাসের মধ্যে। না হলে, বিলটি আইন হিসেবে গৃহীত বলে বিবেচিত হবে। এই রায়ের পরই দেশের সংবিধানিক কাঠামো ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য ছিল স্পষ্ট: “এটা তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খায় না। রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়া, তাও আদালতের তরফে, ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিপন্থী।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতি দেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষার শপথ গ্রহণ করেন। অন্যদিকে, মন্ত্রী, সাংসদ, উপরাষ্ট্রপতি এমনকি বিচারপতিরাও শুধুমাত্র সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেন। এই পার্থক্য ব্যাখ্যা করে ধনখড় বলেন, রাষ্ট্রপতির উপর বিচারব্যবস্থার কোনও রকম নির্দেশমূলক ক্ষমতা নেই।
উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “সংবিধানের ১৪৫(৩) ধারা অনুযায়ী পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ ছাড়া বিচারব্যবস্থা সংবিধান ব্যাখ্যা করতে পারে না। অথচ এখন বিচারপতিরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, বিচারব্যবস্থা যদি আইনসভা বা প্রশাসনের ভূমিকা নেয়, তবে গণতন্ত্রের ভিত্তিই নষ্ট হয়ে যাবে। “এই প্রবণতা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছে, যা অত্যন্ত গভীর পর্যায়ের উদ্বেগের বিষয়।”
উপরাষ্ট্রপতির বক্তব্য ছিল একটি মৌলিক বার্তা— গণতন্ত্রে বিচারব্যবস্থার, আইনসভা ও প্রশাসনের নিজস্ব পৃথক ভূমিকা রয়েছে। এই সীমারেখা লঙ্ঘন করা মানে গণতন্ত্রের স্বরূপকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা।
ধনখড়ের এদিনের মন্তব্য নতুন করে বিচারব্যবস্থার ভূমিকা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেখানে ক্ষমতার পৃথকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এক স্তম্ভের অন্য স্তম্ভে হস্তক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে বলেই মনে করছেন অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ।