spot_img
30 C
Kolkata
Friday, May 9, 2025
spot_img

ওয়াক্‌ফ আইন: বিতর্কিত ধারা স্থগিত হতে পারে, আজ ফের শুনানি সুপ্রিম কোর্টে

কলকাতা টাইমস নিউজ  ডেস্ক :

য়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন, ২০২৫–কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উত্তাল বিতর্কের মাঝে আজ ফের সেই আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবারের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানায়, এই আইন অনুযায়ী ‘অ-মুসলিম’দের ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তি, কালেক্টরদের ওয়াক্‌ফ সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষমতা এবং আদালত ঘোষিত ওয়াক্‌ফ সম্পত্তিকে ‘ডি-নোটিফাই’ করার বিধানগুলিকে তারা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ (ন্যায়মূর্তি পি ভি সঞ্জয় কুমার এবং কে ভি বিশ্বনাথন সহ) এই আইন নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার শুনানি করেন বুধবার। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন—“যেসব সম্পত্তিকে আদালত ওয়াক্‌ফ বলে ঘোষণা করেছে, সেগুলিকে এই সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ডি-নোটিফাই করা যাবে না। ইতিহাসকে আইন দিয়ে নতুন করে লেখা যায় না।”

তিনি আরও বলেন, জেলা শাসকরা যদি কোনো ওয়াক্‌ফ সংক্রান্ত শুনানি চালাতে চান, তাহলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে তা করতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট ধারা আপাতত কার্যকর করা যাবে না।

প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণ করেন, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টগুলির পরিচালনায় কেবল হিন্দুরাই থাকে, তাহলে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য নিয়োগ কেন? এটি সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি বলেন, শুধুমাত্র এক্স-অফিসিও পদে নিয়োগ ছাড়া অন্য সদস্যরা মুসলিম হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।

সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল বলেন, “একজন কালেক্টর কখনও ধর্মীয় বিশ্বাস সংক্রান্ত বিতর্ক মেটাতে পারেন না। এ একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার হরণের সামিল।”

অন্যদিকে, কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি দেন, “এই আইন পাস হয়েছে সংসদের যৌথ কমিটির দীর্ঘ পর্যালোচনার পর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মতামত গ্রহণ করে তবেই তা চূড়ান্ত হয়।”

শুনানিতে আদালত প্রশ্ন তোলে—‘ওয়াক্‌ফ বাই ইউসেজ’ অর্থাৎ বহু প্রাচীন ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহৃত ধর্মীয় সম্পত্তিকে কীভাবে রেজিস্ট্রি করা হবে? প্রমাণ কোথা থেকে আসবে? এর অপব্যবহার যেমন হতে পারে, তেমনই বহু প্রকৃত সম্পত্তি এই সংশোধনীর ফলে হারিয়ে যাবে।

শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা দেখছি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে এই আইনকে ঘিরে হিংসা ছড়াচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। বিষয়টি আদালতের বিবেচনায় রয়েছে, তাই রাস্তায় এই ধরনের প্রতিক্রিয়া কাম্য নয়।”

এই সংশোধনী বিলটিকে কেন্দ্র করে দেশের নানা প্রান্তে বিরোধীতা করছে একাধিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড, আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, মহুয়া মৈত্র, চন্দ্রশেখর আজাদ সহ আরও অনেকে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই আইন সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করছে।

অন্যদিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সরকারগুলি যেমন রাজস্থান, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশ এই আইনের পক্ষে সওয়াল করেছে। একইভাবে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভাও এই সংশোধনীর পক্ষে আদালতে আবেদন জানিয়েছে।

আইনের বৈধতা, ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা এবং সরকারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে হস্তক্ষেপ কতটা যুক্তিসঙ্গত—এই প্রশ্নগুলির উত্তর আজ সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশে কিছুটা হলেও স্পষ্ট হতে পারে।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,300SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks