কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
বারাণসীতে এক ১৯ বছরের তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রশাসনিক মহল। অভিযোগ, গত ২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছয়দিন ধরে ওই তরুণীকে ২৩ জন ব্যক্তি পালা করে একাধিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির পরিবার ৬ এপ্রিল পুলিশে অভিযোগ জানায়।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বারাণসী পুলিশ শহরের ১০০-রও বেশি হোটেল ও হুক্কা বারে অভিযান চালায় এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। অভিযানে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বারাণসীর সাংসদ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এই ঘটনায় গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। এদিন সকালে বারাণসী বিমানবন্দরে নামার পরই তিনি পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে “সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা” নেওয়ার নির্দেশ দেন।
ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ (ডিসিপি) গৌরব বান্সওয়াল বলেন, “এই ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি হোটেলে বেআইনি কাজ, যেমন দেহব্যবসা ও মাদকসেবন, চলছিল। এই কারণেই একযোগে একাধিক হোটেল ও হুক্কা বারে তল্লাশি চালানো হয়েছে।”
অবৈধ কাজের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট হোটেল ও হুক্কা বারগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে, আরও হোটেল ও স্পা সেন্টারে অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
লালপুর-পাণ্ডেয়পুর এলাকায় ওই তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগে ইতিমধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ (এসিপি) বিদূষ সাক্সেনা।
মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সে কিছু যুবকের সঙ্গে বাইরে গিয়েছিল। ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সে বাড়ি না ফেরায়, তার পরিবার নিখোঁজ ডায়েরি করে। পরে ৬ এপ্রিল তরুণীর মা অভিযোগ জানান, তার মেয়েকে একাধিক হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা তরুণীকে মাদক খাইয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে নিয়ে যায় এবং ছয় দিন ধরে লাগাতার ধর্ষণ করে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন রাজ বিশ্বকর্মা, সামির, আয়ুষ, সোহেল, দানিশ, অমল, সাজিদ, জহির, ইমরান, জইব, অমন ও রাজ খান।
এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংস্করণ ভারতীয় ন্যায় সঞ্জীবন (Bharatiya Nyaya Sanhita) অনুযায়ী একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে— যার মধ্যে রয়েছে ৭০(১) (গণধর্ষণ), ৭৪ (নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে হামলা), ১২৩ (মাদক খাইয়ে আঘাত), ১২৬(২) (অন্যায়ভাবে বাধা প্রদান), ১২৭(২) (অন্যায়ভাবে আটক) এবং ৩৫১(২) (অপরাধমূলক ভয় দেখানো)।
তরুণীর মা জানিয়েছেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। আমি চাই তিনি নিজের কানে শুনুন, কী নিপীড়নের শিকার হয়েছে আমার মেয়ে।”
উত্তরপ্রদেশ সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কেবল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেননি, পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রুখতে প্রশাসনিক স্তরে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।