spot_img
31 C
Kolkata
Friday, May 9, 2025
spot_img

মুর্শিদাবাদের হিংসা নিয়ে খারগে ও রাহুলের নীরবতা—কেন এই চুপচাপ অবস্থান?

কলকাতা টাইমস নিউজ  ডেস্ক :সম্পাদকীয়

দেবজিৎ গাঙ্গুলী :

ম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের প্রতিবাদ ঘিরে যে হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা গোটা রাজ্যেই এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই ঘটনার জেরে দুই নিরীহ হিন্দু ব্যক্তিকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে, বহু হিন্দু পরিবারকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, এবং ঘরবাড়ি, সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে পরিস্থিতি, এখনও কিছু কিছু এলাকায় অস্থিরতা বজায় রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় কংগ্রেস দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের—বিশেষ করে সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে, লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর—সম্পূর্ণ নীরবতা বিস্ময়কর ও নিন্দনীয়।

যখন মণিপুরের মতো রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা নিয়ে কংগ্রেস নিরবচ্ছিন্নভাবে কেন্দ্রকে চাপে রেখেছিল, তখন মুর্শিদাবাদের মতো ঘটনায় মুখ না খোলা কি দ্বৈত নীতির পরিচায়ক নয়? হিংসা, তা যেকোনো দিক থেকেই আসুক না কেন, নিন্দনীয়। এখানে দুই নিরীহ নাগরিককে কেবলমাত্র তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে—এ ঘটনা নৃশংস ও গণতান্ত্রিক সমাজের পরিপন্থী।

একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলার মধ্যে বসবাসকারী হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সংঘটিত এই সহিংসতায় কংগ্রেসের নীরবতা বহু প্রশ্ন তুলে দেয়। দলটির অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে, তারা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এই হিংসার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না, যাতে তারা যেন সংখ্যালঘু বিরোধী বলে চিহ্নিত না হয়। একইসাথে, তারা যেন হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক ভারসাম্য হারাতে না চায়।

কিন্তু এই নিরবতা কতটা গ্রহণযোগ্য? ধর্মনিরপেক্ষতা কি কেবলমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানো মানে? কংগ্রেস কি চুপ থেকে এমন বার্তা দিচ্ছে না যে, হিন্দুদের উপর আক্রমণ হলে তাদের প্রতিক্রিয়া অনুচিত?

এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা যাক কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রসঙ্গের সাথে। তাঁদের উপর অত্যাচার, দেশছাড়া হওয়া, এবং এখনও পর্যন্ত স্বভূমিতে ফিরতে না পারা—এসব নিয়ে বহু রাজনৈতিক দল কথা বললেও, প্রকৃত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। মুর্শিদাবাদের ঘটনায়ও হিন্দুদের একাংশ তাঁদের জন্মভূমি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, এবং কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে একটি বাক্যও ব্যয় করেনি।

এই নিরবতা রাজনৈতিকভাবে কংগ্রেসের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বহরমপুরের নির্বাচনী ফলাফল তার প্রমাণ—অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মতো পাঁচবারের সাংসদ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে মুসলিম সম্প্রদায়েরই একজন নতুন, রাজনৈতিকভাবে অনভিজ্ঞ প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হেরে যান। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, কংগ্রেস যতই সংখ্যালঘু ভোটের দিকে ঝুঁকে পড়ুক না কেন, তারা এখনও মুসলিম ভোটারদের প্রথম পছন্দ নয়। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে সংখ্যালঘু ভোটের ক্ষেত্রে সমাজবাদী পার্টি এবং আরজেডি-র প্রাধান্য বেশি।

সুতরাং, হিংসার বিরুদ্ধে মুখ না খোলা মানে কেবল নীতিগত দুর্বলতা নয়, রাজনৈতিক আত্মঘাতও বটে।

একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে কংগ্রেসের উচিত ছিল এই হিংসার তীব্র নিন্দা করা। যারা গণতন্ত্রের, সংবিধানের ও মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশিত। কোনো একটি সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে যদি অন্য একটি সম্প্রদায়ের উপর হওয়া হিংসাকে নীরবে মেনে নেওয়া হয়, তাহলে তা নীতিগত দেউলিয়াপনার দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,300SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks