কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
যখন পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার আগুনে জ্বলছে, সেই সময় নদিয়ার শান্তিপুর থেকে উঠে এল এক নিঃশব্দ মানবিকতার কাহিনি—যেখানে ধর্ম নয়, জয়ী হল মনুষ্যত্ব।
মালঞ্চা পাড়ার বাসিন্দা অনোয়ার শেখ, একজন মুসলিম যুবক, মারণ রক্তাল্পতায় ভুগে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের রক্তভাণ্ডার তখন প্রায় শূন্য। পরিবারের প্রচেষ্টায় রক্ত জোগাড় সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সামাজিক মাধ্যমে জরুরি আবেদন জানায় রক্তদানের জন্য।
এই আবেদনে সাড়া দেন শান্তিপুরের দুই হিন্দু যুবক—প্রসেনজিৎ দাস এবং সুপন্থ দত্ত। তাঁরা রক্তদানের জন্য হাসপাতালে ছুটে যান, তখনো জানতেন না কাকে রক্ত দেবেন। হাসপাতালে পৌঁছে যখন জানতে পারেন রক্তগ্রহীতা একজন মুসলিম যুবক, তবুও তাঁদের সিদ্ধান্ত এক বিন্দু পরিবর্তন হয়নি।
প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “জীবন বাঁচানোই ছিল একমাত্র উদ্দেশ্য। ধর্ম একটা রাজনৈতিক অস্ত্র হতে পারে, কিন্তু মনুষ্যত্বের কোনও ধর্ম নেই।”
তিনি আরও বলেন, “কাজী নজরুল ইসলামের সেই বাণী আমাদের মনে পড়া উচিত—‘হিন্দু-মুসলমান দুইটি ভাই, এক শরীরের দুটি অঙ্গ।’ আমাদের সেই আত্মবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে।”
এই ঘটনা ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন প্রতিবেশী মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইনের সংশোধন ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়িয়েছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই প্রসেনজিৎ ও সুপন্থের নিঃশব্দ সাহসিকতা হয়ে উঠেছে বিরল এক বার্তা—ঘৃণার শৃঙ্খল ছিঁড়ে মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং রক্তদাতা সংগঠনের অন্যতম সদস্য রহুল্লা কারিকার বলেন, “আমরা সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চাই, সেটা যে ধর্মেরই হোক না কেন। এই দুই যুবক দেখিয়ে দিল, ধর্ম নয়—মানবতাই শেষ কথা। রক্তের কোনও ধর্ম নেই, সহানুভূতিরও কোনও সীমানা নেই।”
এই কাজ হয়তো বড় কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, তবে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তা এক গভীর বার্তা দেয়। রক্তদান, এই নিঃশব্দ প্রতিবাদই আজ সমাজের আসল শক্তি—সহমর্মিতা, একতা, এবং মানবিকতা।
যখন রাজ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভাজনের রাজনীতিতে, তখন প্রসেনজিৎ ও সুপন্থের মতো মানুষরাই প্রমাণ করে দিচ্ছেন—ভালোবাসা, সহানুভূতি ও বন্ধুত্বই বাংলার আসল চেহারা।