কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিনিধি :
ওড়িশার কেনঝর জেলা কারাগার থেকে বুধবার মুক্তি পেল গ্রাহাম স্টেইন্স হত্যা মামলার অন্যতম দোষী মহেন্দ্র হেমব্রম। কারাবন্দি অবস্থায় ভাল আচরণের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের সাজা পর্যালোচনা বোর্ডের সুপারিশে ২৫ বছর সাজা ভোগের পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (VHP)।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে মনোহরপুর গ্রামে অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইন্স এবং তাঁর দুই পুত্র ফিলিপ (১০) ও টিমোথি (৬)-কে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর দেশজুড়ে এবং আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
হেমব্রম, যিনি বজরং দলের নেতা দারা সিং-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, হত্যাকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ। ঘটনার রাতে একটি গাড়ির ভিতর ঘুমিয়ে থাকা স্টেইন্স পরিবারকে বাইরে থেকে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও পরবর্তীকালে একাংশের দাবি, গাড়িকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে খড় দিয়ে ঢাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোট ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩৭ জনকে পরবর্তীতে মুক্তি দেওয়া হয়। হেমব্রম সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় এবং ২০০৩ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ২০১১ সালে তাকে কেনঝর জেলে স্থানান্তর করা হয়।
কারাগার থেকে মুক্তির পর হেমব্রম দাবি করেন, তিনি নির্দোষ এবং ভুলভাবে ফাঁসানো হয়েছিল। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “ধর্মান্তর সংক্রান্ত একটি ঘটনার মিথ্যা মামলায় আমি ২৫ বছর কারাবন্দি ছিলাম। আজ আমি মুক্ত।” কারাগার থেকে তাকে একটি ব্যাঙ্ক পাসবুকও প্রদান করা হয়েছে, যেখানে বন্দি অবস্থায় তার উপার্জনের হিসাব রয়েছে।
হেমব্রমের মুক্তির ঘটনায় খুশি হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক কেদার দাশ জানান, “আজ আমাদের জন্য খুশির দিন। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই।”
এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দারা সিং বর্তমানে এখনও কারাগারে রয়েছেন। তার মৃত্যুদণ্ড ২০০৫ সালে ওড়িশা হাইকোর্টে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়, যা পরে সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকে। ২০২৪ সালে তিনি দয়া ভিক্ষার আবেদন করেন এবং ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট ওড়িশা সরকারকে তার মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে এখনও পর্যন্ত তিনি জেলে রয়েছেন।
গ্রাহাম স্টেইন্স ও তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে একটি তীব্র বার্তা হিসেবে কাজ করে এবং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার সৃষ্টি করে।