কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিনিধি :
দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে এক আবেগঘন ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় মন্দির উদ্বোধনের দিন তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি স্বর্ণঝাঁটা দান করবেন এবং নিজের তহবিল থেকে ₹৫,০১,০০০ অনুদান দেবেন।
নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যখন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দান ও আরাধনার প্রক্রিয়া শুরু হবে, আমাকে জানাবেন। আমি প্রথমে একটি স্বর্ণঝাঁটা দিয়ে দান শুরু করব। ইতিমধ্যেই ₹৫,০০,০০১ টাকার চেক প্রস্তুত।”
এই স্বর্ণঝাঁটা দানের ভাবনা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুরাগ নয়, বরং তা এক ঐতিহাসিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রতীক। পুরীর রথযাত্রায় গজপতি রাজা স্বর্ণঝাঁটা দিয়ে ভগবান জগন্নাথের রথের পথ পরিস্কার করেন—এটি এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দান, একই ধারাবাহিকতায়, তাঁকে জড়িয়ে দেয় সেই ধর্মীয় পরম্পরার সঙ্গে এবং তুলে ধরে একজন সংস্কৃতিবান নেত্রীর চেহারা।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে খবর, এই দান ও মন্দির উদ্বোধন পূর্ব মেদিনীপুর তথা উপকূলবর্তী হিন্দু ভোটারদের মন জয় করার কৌশল হতে পারে, যেখানে বিগত নির্বাচনে বিজেপির আধিপত্য বাড়তে দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি, জগন্নাথ দেব এমন এক দেবতা যিনি জাতপাত এবং আঞ্চলিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে। সেই কারণে তাঁর নাম উচ্চারণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত বিজেপির ‘সংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’-এর পাল্টা প্রতীক তৈরি করছেন বলে মত বিশ্লেষকদের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, “পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে যেমন স্বর্ণঝাঁটা রাখা থাকে, তেমনই দিঘার মন্দিরেও স্থায়ীভাবে রাখা হবে একটি ঝাঁটা।” তাঁর এই ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকের মতে, এটি এক প্রকার বার্তা—ধর্মীয় সংস্কৃতি বা হিন্দু ভাবাবেগ নিয়ে একচেটিয়া দাবি কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না।
আসন্ন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ভক্তদের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। সেই কারণে আমাদের এখনই প্রশাসনিক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করতে হবে যাতে যজ্ঞ ও উদ্বোধনের সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।” নবান্নের উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসকন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ-সহ নানা ধর্মীয় ও প্রশাসনিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। নিরাপত্তা, ট্র্যাফিক, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব আগেভাগেই ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন এই ঘোষণার সময় নিয়েই—নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না। তবে তৃণমূলের সমর্থকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী সব ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ করে থাকেন—দুর্গাপুজো থেকে মহরম পর্যন্ত। তাই এই দান তাঁর বহুমাত্রিক ও সংবেদনশীল রাজনৈতিক দর্শনেরই অংশ।
দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পর দিঘার জগন্নাথ মন্দির আজ প্রায় সম্পূর্ণ। ধর্মীয় পর্যটনের এক নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা এই মন্দিরের ইতিহাসে স্বর্ণঝাঁটার দান একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু একজন ভক্ত নয়, বরং একজন নেত্রী হিসেবেও এই দানের মাধ্যমে নিজেকে এই ঐতিহাসিক অধ্যায়ে স্থায়ীভাবে সংযুক্ত করলেন।