কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব সংবাদদাতা :ভোপাল:
প্রজেক্ট চিতা-র অধীনে বতসোয়ানা (Botswana) থেকে দুই ধাপে মোট ৮টি চিতা ভারতে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে মে মাসে চারটি চিতা ভারতের মাটিতে পা রাখবে বলে শুক্রবার সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। এই তথ্য মধ্যপ্রদেশের ভোপালে অনুষ্ঠিত একটি পর্যালোচনা সভায় প্রকাশ করা হয়।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এবং ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (NTCA)-র প্রতিনিধিরা।
মধ্যপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও কেনিয়া থেকে চিতা ভারতে আনার প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম ধাপে মে মাসে বতসোয়ানা থেকে চারটি চিতা আসবে। পরে আরও চারটি আনা হবে। কেনিয়ার সঙ্গে এই বিষয়ে একটি চুক্তির খসড়া নিয়েও আলোচনা চলছে।”
এনটিসিএ কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত চিতা প্রকল্পে ১১২ কোটিরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে মধ্যপ্রদেশে চিতা পুনর্বাসনের জন্য।
এই নতুন দলটিকে মধ্যপ্রদেশের গান্ধী সাগর স্যাংচুয়ারি-তে রাখা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এটি রাজস্থান সীমান্তের কাছে অবস্থিত এবং এখন একে দ্বিতীয় চিতা আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মধ্যে আন্তঃরাজ্য চিতা সংরক্ষণ অঞ্চল তৈরির ব্যাপারে একটি নীতিগত সমঝোতাও হয়েছে।
চিতা সংরক্ষণে স্থানীয় স্তরে অংশগ্রহণ বাড়াতে কুনো ন্যাশনাল পার্ক এবং গান্ধী সাগরে “চিতা মিত্র”-দের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কুনো ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে ২৬টি চিতা। এদের মধ্যে ১৬টি মুক্ত পরিবেশে বিচরণ করছে, আর ১০টি রয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্রের ঘেরাটোপে। ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া শাবকের সংখ্যা ১৪।
“মেয়ে চিতা জ্বালা, আশা, গামিনী ও বীরা শাবকের জন্ম দিয়েছে,” এমনটাই জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। এছাড়াও, পর্যটকদের আগমন গত দুই বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সব চিতাকেই স্যাটেলাইট কলার দিয়ে নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার কুনো ন্যাশনাল পার্কে চিতা সাফারি চালুর অনুমতির জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেছে। “বনাঞ্চল ও পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকায় সাফারি চালুর আগে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। এই বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি,” বলে জানানো হয়েছে।
ভারতে চিতা পুনঃপ্রবর্তনের এই মহাযজ্ঞ শুরু হয় ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, যখন নামিবিয়া থেকে ৫টি স্ত্রী ও ৩টি পুরুষ চিতাকে কুনোতে আনা হয়। এটি ছিল বিশ্বের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় চিতা স্থানান্তরের ঘটনা। এরপর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আরও ১২টি চিতা আনা হয়।
উল্লেখ্য, ভারতে চিতা ১৯৫০-এর দশকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে বিলুপ্ত এই প্রজাতিকে পুনঃস্থাপন করা।