কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাজ্যের প্রথম নাগরিক গুরুতর অসুস্থ। সোমবার সকালেই বুকে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করায় রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে দ্রুত ভর্তি করানো হয় কলকাতার কমান্ড হাসপাতালে। প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছে হৃদযন্ত্রে ব্লকেজ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি কিছুটা গুরুতর, এবং প্রয়োজনে বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
এই ঘটনার কথা জানার পর রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তৎপর হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সকালেই হাসপাতালে গিয়ে রাজ্যপালের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,“আমি মুখ্যসচিবকে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি, রাজ্যপালের চিকিৎসায় যেন কোনও রকম ত্রুটি না হয়। আমরা ওঁর দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।”
সেখান থেকেই তিনি নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির উদ্দেশে রওনা দেন।
সূত্রের খবর, রাজ্যপাল গত কয়েকদিন ধরে টানা জেলাসফরে ব্যস্ত ছিলেন। প্রবল গরমের মধ্যেই তিনি গিয়েছিলেন মালদা ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে। ওয়াকফ ইস্যু ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তিনি নিজের উদ্যোগেই পৌঁছে যান বৈষ্ণবনগরের ত্রাণ শিবির এবং সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে। প্রশাসনিক তৎপরতা ও সামাজিক সংহতির বার্তা দিতে গিয়ে রাজ্যপাল অবিরাম ছুটে বেড়িয়েছেন জেলার পর জেলা।
শনিবারই তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। রবিবার বিশ্রামে ছিলেন। আর সোমবারই ভোররাতে শুরু হয় শারীরিক অসুস্থতা। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কমান্ড হাসপাতালে।
চিকিৎসকদের মতে, রাজ্যপালের হৃদযন্ত্রে একাধিক ব্লকেজ রয়েছে। তাঁর বয়স বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকি কমাতে আপাতত স্টেবিলাইজেশনের দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে কমান্ড হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল রাজ্যপালের উপর নজর রাখছেন। অন্য কোনও সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরের বিষয়েও প্রাথমিক আলোচনা চলছে।
রাজনীতির ময়দানে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সম্পর্ক মাঝেমধ্যে তপ্ত হলেও, এই ঘটনাপ্রবাহে ফের উঠে এল সৌজন্যের এক মানবিক ছবি। রাজ্যপালের শারীরিক সংকটে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উপস্থিতি এবং প্রশাসনিক নজরদারি রাজ্য-রাজ্যপালের সম্পর্কের মাঝে এক সহমর্মিতার বার্তা দিয়ে গেল।
অন্যদিকে রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত আপডেটগুলি নিয়মিতভাবে রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। রাজ্যপালের পরিবারের সদস্যরাও তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে অবগত রয়েছেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
রাজ্যপালের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। শাসক ও বিরোধী শিবির, উভয় তরফ থেকেই তাঁর দ্রুত আরোগ্যের কামনা করা হয়েছে। রাজ্যপাল যেন শীঘ্রই সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন স্বাভাবিক কর্মজীবনে—এটাই এখন সকলের কামনা।