spot_img
27 C
Kolkata
Thursday, May 8, 2025
spot_img

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র গোপন বৈঠক, পূর্ব সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিবেদন:


বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের চার দিনের আমেরিকা সফর ঘিরে চরম সতর্কতায় ভারতের গোয়েন্দা মহল। সূত্রের খবর, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসবেন তিনি। এই সফর কেবল একটি কূটনৈতিক সৌজন্য নয়—বরং মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আসন্ন সামরিক অভিযানের পূর্ব প্রস্তুতি বলেই মনে করছেন ভারতের কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, রবিবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ঢাকা ছাড়েন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ আনোয়ার মাহমুদ (বাংলাদেশ কাউন্টার টেররিজম ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান) এবং সেনাবাহিনীর অর্ডন্যান্স বিভাগের এক পদস্থ কর্তা। তাঁদের সঙ্গে পরিবার পরিজন থাকাও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সফরটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের পূর্ণ সম্মতির সঙ্গেই অনুমোদিত হয়েছে।

একইসাথে কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য রাখাইন রাজ্যে একটি যৌথ সামরিক অভিযান নিয়ে মার্কিন কর্তাদের অবহিত করা। এই অভিযানে আরাকান আর্মি, চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং সম্ভবত বিতর্কিত আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (ARSA)-র ভূমিকা থাকছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই অভিযানের পেছনে মূল লজিস্টিকাল সহায়তা দেবে বলেও দাবি করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের উদ্বেগ যে বেড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ, রোহিঙ্গা সমস্যা এবং বঙ্গোপসাগরীয় কৌশলগত স্বার্থ—সব মিলিয়ে ভারতের জন্য রাখাইন অঞ্চল অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ফলে বাংলাদেশ ও আমেরিকার যৌথ তৎপরতা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত দিল্লি।

অন্যদিকে আলমের ওয়াশিংটন যাত্রার ঠিক পরেই ঢাকায় এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল সারওয়ার ফরিদ, বর্ডার গার্ডস-এর ডিজি মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং কোস্ট গার্ড প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল জিয়াউল হক। বৈঠকে বাংলাদেশের স্থল, জল এবং পার্বত্য সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে নতুন উদ্বেগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

অপরদিকে সীমান্তবর্তী টেকনাফের উত্তরে সিলখালী মৌজায় বাংলাদেশ একটি লজিস্টিক সাপোর্ট বেস তৈরির পরিকল্পনা করছে বলে খবর। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী এবং সক্রিয় অবস্থান গ্রহণের বার্তা। এই পরিস্থিতি ভারতের পূর্ব সীমান্তে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে বলেই ধারণা।

আলমের সফরের কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এসেছিলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তিন সিনিয়র প্রতিনিধি—নিকোল চুলিক, অ্যান্ড্রু হেরাপ ও নেপিডোর মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সুসান স্টিভেনসন। তাঁরা চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস ও কক্সবাজার ঘুরে গেছেন। এই অঞ্চলগুলো কৌশলগত দিক থেকে শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতের দিক থেকেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

অন্যদিকে রাখাইনে অভিযানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারিত হয়েছে বর্ষার পর, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের দিকে। তবে এখনও সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানে সামান্য ভুলচুক ঘটলেও তা গোটা অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা ছড়াতে পারে। ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মণিপুর সংলগ্ন সীমান্ত বরাবর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীরা কতটা সমন্বয় রাখতে পারবে—তা এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানান, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার বর্ধিত নিরাপত্তা সংযোগ, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সক্রিয় ভূমিকায় অংশগ্রহণ এবং আরএসএ-এর মতো বিতর্কিত গোষ্ঠীর সম্ভাব্য জড়িয়ে পড়া—সব মিলিয়ে আমাদের সামনে এক নতুন কৌশলগত বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে।”

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,300SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks