কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :বেঙ্গালুরু:
সকাল তখন মাত্র ৬টা। বেঙ্গালুরুর রাস্তা তখনো ব্যস্ত হয়নি। ডিআরডিওর কোয়ার্টার থেকে বিমানবন্দরের পথে যাচ্ছিলেন উইং কমান্ডার শিলাদিত্য বসু, পাশে ছিলেন স্ত্রী স্কোয়াড্রন লিডার মধুমিতা দত্ত। হঠাৎই এক বাইক আরোহীর সঙ্গে বচসা—আর তারপরেই শুরু হয় এমন এক ঘটনা, যার জল গড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া, আদালত, এমনকি ভারতীয় বায়ুসেনার গৌরবকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
একদিকে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার, অন্যদিকে সফটওয়্যার সংস্থার কলে সেন্টার টিম হেড। ঘটনা যাই হোক, এখন দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের হয়েছে।
উইং কমান্ডার বসুর দাবি, কিছু কন্নড়ভাষী বাইক আরোহী তাঁকে রাস্তার মাঝে গালিগালাজ করে তাড়া করেন। ভিডিও প্রকাশ করে তিনি জানান, তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে চরম হেনস্থা করা হয়। প্রথমে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করে বিকাশ কুমারকে—একজন কলে সেন্টার কর্মী।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়।পাল্টা অভিযোগ আনেন বিকাশ কুমার, তাঁর দাবি, কম্যান্ডারই প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁকে মারধর করেন, তাঁর বাইক ভেঙে দেন, এবং পুরো ঘটনা সাজানো। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এবার ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে ‘অত্যন্ত মারাত্মক আঘাত’-এর ধারায় শিলাদিত্য বসুর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়।
ঘটনার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ, পথচারীদের মোবাইল ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানায়—দুই পক্ষই একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। কিছু ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, রাস্তার মাঝে মারধর করছেন কম্যান্ডার, পাশেই চেষ্টা করছেন তাঁর স্ত্রী শান্ত করতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবার বলছিলেন, “চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
অন্যদিকে বিকাশ কুমারের মা জ্যোতি কুমার সংবাদমাধ্যমে ভিডিও বার্তা দেন—
“আমার ছেলে যদি ভুল করে থাকে, তার জন্য আদালত আছে। কিন্তু একজন সেনা অফিসার প্রকাশ্যে একজন সাধারণ ছেলেকে মারছেন, বাইক ভেঙে দিচ্ছেন—এটাই কি ঠিক? আমরা প্রথমে কিছু বলিনি, মামলা করিনি, ভেবেছিলাম ছেড়ে দিই। কিন্তু এখন ওঁরাই আমাদের ছেলেকে হয়রান করছেন।”
বেঙ্গালুরুর ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ দেবরাজ ডি জানান,“সকাল ৬টার দিকে দু’পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। তারপর দুই পক্ষই একে অপরকে হেনস্থা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। আমরা সিসিটিভি ও মোবাইল ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত চালাচ্ছি।”
তিনি জানান, কম্যান্ডার প্রথমে থানায় এলেও তখন দেরি হয়ে যাচ্ছিল বলে তিনি সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। পরে তাঁর স্ত্রী মধুমিতা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান।
এই ঘটনার সূত্রে অনেক বড় প্রশ্ন উঠে আসছে—
- সরকারি খেতাব কি কাউকে আইনের উর্ধ্বে দাঁড় করায়?
- এমন এক শহরে যেখানে ভাষা, পেশা ও পরিচয়ের সংঘর্ষ প্রায়শই হয়, সেখানে কি ব্যক্তিগত বিবাদও সামাজিক রূপ নিতে বাধ্য?
বেঙ্গালুরু শহর অনেক কিছু দেখেছে, কিন্তু এই ঘটনা তার নাগরিকদের মনে একটা প্রশ্ন রেখে গেল—সম্মান কি শুধু পোশাকে, না আচরণেই তার প্রকৃত রূপ?