কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
কাশ্মীরের পাহাড়ি উপত্যকায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক, একজন নৌসেনা অফিসার ও এক আইবি আধিকারিককে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করার পর যখন গোটা ভারত স্তব্ধ, তখন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এই নারকীয় ঘটনার দায় এড়িয়ে জানালেন—”পাকিস্তানের কোনো ভূমিকা নেই, এটি ভারতের নিজস্ব ঘরোয়া বিদ্রোহ।”
এই মন্তব্যে নতুন করে বিতর্ক ডানা বাঁধছে। কারণ আন্তর্জাতিক স্তরে এই হামলাকে স্পষ্ট সন্ত্রাসবাদ হিসেবেই দেখছে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক ও কূটনীতিকমহল। অথচ ইসলামাবাদ একে দেখছে “অভ্যন্তরীণ আন্দোলন” হিসাবে।
খাজা আসিফ বলেন, “এটি একেবারে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। কাশ্মীর থেকে মণিপুর, ছত্তিশগড় থেকে নাগাল্যান্ড—ভারতের বহু জায়গায় মানুষের মধ্যে বিদ্রোহ চলছে। এই রকম পরিবেশে দায় চাপানো খুবই সহজ। কিন্তু পাকিস্তানের কোনো যোগ নেই এই ঘটনায়।”
তাঁর এই মন্তব্য অনেককেই অবাক করেছে। কারণ ভারতীয় গোয়েন্দা মহলের মতে, হামলাকারীরা লস্কর-ই-তইবা–র ঘনিষ্ঠ সংগঠন TRF-এর সদস্য। অতীতে এই সংগঠন পাকিস্তান ঘাঁটিত বলেই পরিচিত। যদিও ভারত সরকার এখনও সরকারিভাবে পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করেনি।
খাজা আসিফ আরও বলেন, “ভারত আমাদের ওপর অভিযোগ তোলে, অথচ ওরাই আমাদের বেলুচিস্তান সহ নানা এলাকায় অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। আমরা বহুবার তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি যে ভারত আফগানিস্তান থেকে আমাদের ভিতরে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।”
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকও এই ঘটনায় কোনো ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ শব্দ ব্যবহার করেনি। বরং তাদের বিবৃতি ছিল অনেকটাই নিষ্প্রভ—“আমরা দুঃখিত, পর্যটক নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে যখন একটি ভয়ঙ্কর হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তখন প্রতিবেশী দেশের এক শীর্ষ মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে।
ভারতের এক কূটনীতিকের মতে, “এই হামলার নিন্দা না করে, বরং একে ঘরোয়া সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা শুধুই রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।”
ভারতীয় রাজনীতিতেও এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন, এই ঘটনার জন্য জরুরি বৈঠকও ডাকেন তিনি।
সবচেয়ে বিতর্কিত মন্তব্যটি ছিল আসিফ, ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর একজন সিনিয়র নেতার “এই আন্দোলন হিন্দুত্ববাদী দমননীতির বিরুদ্ধে। সংখ্যালঘুদের—খ্রিস্টান, বৌদ্ধ—এমনকি মুসলমানদের উপর অত্যাচারের ফলেই এই বিদ্রোহ।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, পাকিস্তানের এই বক্তব্য শুধুমাত্র দায় ঝেড়ে ফেলার জন্য নয়, বরং নিজেদের ব্যর্থতাও ঢাকতে চাওয়া। কারণ একদিকে কাশ্মীরে এমন ভয়াবহ হামলা, অন্যদিকে নিজেদের ভূখণ্ডে ক্রমাগত জঙ্গি হানায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান সরকার—এই দুই সঙ্কটের মাঝেই চলছে দোষারোপের খেলা।
এই পরিস্থিতিতে ভারত যা বুঝতে চাইছে তা হলো—পাকিস্তান সরকার এখনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না। শুধু দায় অস্বীকার করলেই সত্য বদলায় না।
কাশ্মীরের বাইসারান উপত্যকায় রক্ত ছড়ানোর দায় কে নেবে? প্রশ্ন এখনও জ্বলছে।