spot_img
30 C
Kolkata
Friday, May 9, 2025
spot_img

‘স্বপ্নের সফরে মৃত্যু’: কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি !

কলকাতা টাইমস নিউজ  :নিজস্ব প্রতিবেদন :কাশ্মীর 

তাঁদের স্বপ্ন ছিল নিসর্গের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার। কাশ্মীরের ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ খ্যাত বৈসারণ উপত্যকায় ঘুরে দেখছিলেন কেউ পোনির পিঠে, কেউ স্রেফ পরিবারের সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মগ্ন। হঠাৎই সেই স্বপ্নে নেমে আসে বিভীষিকা—স্বয়ং মৃত্যুর মতো নিষ্ঠুর, আকস্মিক, এবং নৃশংস।

ঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ, পাকিস্তানপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা বৈসারণ উপত্যকায় ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় নিরীহ পর্যটকদের লক্ষ্য করে। কমপক্ষে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত আরও অনেক। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দুই বিদেশিও।

কর্ণাটকের শিবমোগ্গার ৪৭ বছরের ব্যবসায়ী মঞ্জুনাথ রাও পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। স্ত্রী পল্লবী এবং ১৮ বছরের ছেলে সঙ্গে ছিলেন। পল্লবী কান্নাজড়ানো গলায় জানান,“ওরা গুলি চালাচ্ছিল। আমি আর ছেলে ওদের সামনে কাঁদছিলাম, বলছিলাম আমাদেরও মেরে ফেলো… কিন্তু ওরা আমার স্বামীকেই শুধু মারল।”এই পরিবারটি ১৯ এপ্রিল শিবমোগ্গা থেকে রওনা হয়েছিল, ২৪ এপ্রিল ফেরার কথা ছিল। এখন পল্লবী চান শুধু একটি জিনিস—“আমার স্বামীর দেহটা অন্তত বাড়ি ফিরুক।”

প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, লস্কর-ই-তইবার শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। দুই থেকে তিনজন সশস্ত্র জঙ্গি বিভিন্ন দিক থেকে গুলি চালায়, যাতে পর্যটকদের পালানোর কোনও সুযোগ না থাকে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,“উপত্যকাটা এমন খোলা মাঠ, কোথাও লুকনোর জায়গা নেই। পর্যটকরা ছোটাছুটি করছিলেন, কেউ গাছের আড়ালে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কেউ মাটিতে শুয়ে পড়েছিলেন। অনেকেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন।”

স্থানীয় মানুষ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ছুটে এসে আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন অসংখ্য মানুষ, ফোনে খবর পাচ্ছেন দূরে থাকা আত্মীয়েরা, কারও ফোন বেজে উঠছে, কিন্তু সাড়া দিচ্ছেন না প্রিয়জন।

এই ভয়াবহ ঘটনার খবর পেয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌদি আরব সফর থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-কে ফোন করেন। অমিত শাহ কড়া ভাষায় বলেন,“এই কাপুরুষোচিত হামলার জবাব দেওয়া হবে—সবচেয়ে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হবে দোষীদের বিরুদ্ধে।”

উত্তর কমান্ডের সেনাবাহিনী ও সিআরপিএফ-এর কোবরা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকাজুড়ে তল্লাশি ও ঘেরাও অভিযান শুরু হয়েছে।

উল্লেখ কাশ্মীরের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটনের উপর। গ্রীষ্মের এই মৌসুমেই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান পাহেলগামে। কিন্তু এখন, বৈসারণ উপত্যকা নিস্তব্ধ—শুধু পড়ে আছে স্মৃতির মতো রক্তমাখা চটি, ছিঁড়ে যাওয়া টুপি, উলটে যাওয়া খাবারের ঝুড়ি।

অন্যদিকে “এটা সাধারণ হামলা নয়”— বলছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ

তিনি বলেন,“এই হামলা সাধারণ নাগরিকদের উপর হওয়া সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী আক্রমণের মধ্যে একটি। এটা শুধু নিহতের সংখ্যা নয়, বরং যেভাবে নির্দোষ পর্যটকদের টার্গেট করা হয়েছে, তা আরও ভয়ঙ্কর বার্তা দেয়।”

অপরদিকে কর্ণাটকের মঞ্জুনাথ রাওয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জরুরি বৈঠক ডাকেন। দেহ ফিরিয়ে আনার জন্য দিল্লিতে রেসিডেন্ট কমিশনার ও জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কাশ্মীর ছিল স্বপ্নের মতো জায়গা—সবুজ, শান্ত, মুগ্ধকর। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে অসংখ্য মানুষের জন্য।
একটি প্রশ্ন আজ বারবার ফিরে আসছে—
ভূস্বর্গে এই বর্বরতা কবে থামবে?
কবে মানুষ শুধু প্রকৃতি দেখতে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না?

 

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,300SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles

Enable Notifications Thank You No thanks