কলকাতা টাইমস নিউজ :নিজস্ব প্রতিবেদন :
কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঠিক পরের দিন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল–এর সঙ্গে লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT)-র বাংলাদেশের শীর্ষ নেতার গোপন বৈঠকের খবরে দক্ষিণ এশিয়ার গোয়েন্দা মহলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
এই বৈঠক শুধুমাত্র একজন চিহ্নিত জঙ্গি নেতাকে একটি রাষ্ট্রের মন্ত্রকের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীরতর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিপদের সংকেত—বাংলাদেশের রাজনীতিতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ কি সত্যিই আরও এক ধাপ এগোল?
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ঢাকার আইন মন্ত্রণালয়ে ড. নজরুলের অফিসে বৈঠকটি হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন হারুন ইজহার, যিনি বাংলাদেশের মাটিতে LeT-এর তৎপরতা চালানো একটি গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন জঙ্গি কার্যকর্তা, যাদের বিরুদ্ধে ভারতে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ চালানোর একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ঠিক তার আগেই, ড. নজরুল তাঁর ফেসবুক পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে পাহেলগাম হামলার জন্য দায়ী করেন। কোনও প্রমাণ ছাড়াই এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করায় তাঁর পোস্টটি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
হারুন ইজহার নতুন মুখ নন। ২০০৯ সালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার পরিকল্পনা বানচাল করার সময় তাঁর নাম উঠে আসে। এরপর ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের নিজস্ব মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হলে আবারও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
তাঁর বিরুদ্ধে ২৫টিরও বেশি সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ।
এক সময় পাকিস্তানে পড়াশোনার সময়েই ইজহার লস্কর নেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেন, এবং পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে ‘জিহাদের জন্য’ উসকে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। তাঁর আশেপাশেই গড়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম, তোহিদি জনতা, ও “কারা মুক্তি আন্দোলন”-এর মতো দল।
২০২৪ সালের মার্চে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়—ইজহারের নেতৃত্বে একদল ছাত্র ‘ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জিহাদের অনুমতি’ চাইছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, “একজন চিহ্নিত জঙ্গি নেতা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করছেন এবং সরকারের উচ্চপদস্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করছেন—এই ছবি অত্যন্ত ভয়ানক।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. নজরুলের এমন কার্যকলাপ শুধু রাজনৈতিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয়, বরং এটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি।
শেখ হাসিনার সরকারের প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আরাফাত এই বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন—
“ইউনুস সরকার শুধু চিহ্নিত চরমপন্থীদের মুক্তিই দেয়নি, বরং তাঁদের সহযোগীদের রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়েছে। CTTC ইউনিট থেকে শুরু করে উপদেষ্টা মণ্ডলী—সবখানে মৌলবাদীদের উপদেষ্টা নিয়োগ হচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আজ ড. নজরুলের মতো একজন ব্যক্তি যদি প্রকাশ্যে LeT নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশে মৌলবাদের অনুপ্রবেশ কতটা ভয়ানক জায়গায় পৌঁছেছে।”
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই বৈঠকের বিষয়বস্তু যদি জঙ্গি তৎপরতা সংক্রান্ত হয়, তাহলে সেটি বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কে বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে। ইতিমধ্যে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রক কড়া নজর রাখছে বলে খবর।