একদিকে যখন পুরো কাশ্মীর উপত্যকা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে, আর ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার, ঠিক তখনই পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করল।
শনিবার এক বিবৃতিতে TRF জানায়, “পাহেলগাঁও হামলার সঙ্গে TRF-এর কোনও যোগ নেই। আমাদের বিরুদ্ধে আনীত সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও তড়িঘড়ি করে দেওয়া হয়েছে।”
তাদের দাবি, হামলার পরে তাদের এক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘অননুমোদিত’ বার্তা পোস্ট হয়েছিল — যা আসলে একটি ‘সমন্বিত সাইবার হামলা’র ফল।
TRF-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, এটি একটি পরিকল্পিত সাইবার অনুপ্রবেশের ফলাফল। প্রাথমিক তদন্তে ভারতীয় সাইবার-গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত মিলেছে।”
এ প্রসঙ্গে TRF একটি অডিও ক্লিপও প্রকাশ করেছে, যেখানে হামলার দায় অস্বীকার করা হয়েছে।
তবে, বিশেষজ্ঞ মহলের মতে TRF-এর এই অস্বীকার “বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষায়” উত্তীর্ণ হয়নি। সংগঠনটি ২০২৩ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দ্বারা ইউএপিএ আইনের আওতায় “সন্ত্রাসবাদী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
📌 পাহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট:
গত ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগাঁও এলাকায় নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন নিরীহ নাগরিক। এই হামলার পরেই উপত্যকাজুড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রবল জনরোষ তৈরি হয়।
🛡️ বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) এই হামলার নিন্দা করে বলেছে, “কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু এবং বহু মানুষের আহত হওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। অপরাধীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর টুলসি গ্যাবার্ড ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও ভারতকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছে।
🗣️ প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি:
বিহারে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “আজ বিহারের মাটি থেকে আমি গোটা বিশ্বকে বলছি — যারা সন্ত্রাস চালিয়েছে এবং যারা তাদের মদত দিয়েছে, তাদের শেষপ্রান্ত অবধি ধাওয়া করা হবে। ভারত কাউকেই ছাড়বে না।”
তিনি আরও বলেন, “সমগ্র দেশ আজ দৃঢ় সংকল্পে একজোট। মানবতাবাদে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষ ভারতের পাশে আছেন। আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা ও জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, যারা এই দুঃসময়ে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন।”
🔴 ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ:
পাহেলগাঁও হামলার জবাবে ভারত বেশ কয়েকটি কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে —
-
পাকিস্তানের সামরিক দূতাবাস কর্মীদের বহিষ্কার,
-
ইন্দাস জলচুক্তি স্থগিত,
-
এবং আটারী-ওয়াঘা স্থলসীমান্ত পথ বন্ধ ঘোষণা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা এবং পরবর্তী কূটনৈতিক পাল্টা আঘাত উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।