কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী গ্রাম মথুরাপুর তখন ঘুমে ঢেকেছে। হঠাৎই নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে পুলিশের বিশেষ দল। আর ঠিক তখনই সামনে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ₹৩৩.৫৬ লক্ষ মূল্যের জাল ভারতীয় নোট। সীমান্তে নকল অর্থের গন্ধ কি আরও গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে?
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাটিয়া থানার একটি বিশেষ দল বসিরহাট জেলা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালায় খোলাপোতা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মথুরাপুর গ্রামে। বাড়ির ভেতর চলছিল নিষিদ্ধ কারবার। খোঁজ মেলায় ₹২০০, ₹৫০০ ও ₹২০০০ টাকার বান্ডিল—সবই জাল!
অভিযান চলাকালীন মূল অভিযুক্ত বাড়ির মালিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার ভাই শেখ আবদুল রেজাকে আটক করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সীমান্তপারের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত।
এক শীর্ষ তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, “এটি নিছক জালনোট উদ্ধারের ঘটনা নয়। সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় এমন কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা সব দিক থেকে তদন্ত করছি—এই চক্রের আর কে কে জড়িত, কোথা থেকে এই নোট এসেছে, কোথায় পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।”
এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে জালনোট উদ্ধার হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাওড়া স্টেশন থেকে ধৃত শেখ মুন্নার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ₹৯২,০০০ টাকার জাল নোট। মুন্না ছিলেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এবং একটি আন্তঃরাজ্য চক্রের সদস্য বলে সন্দেহ। এপ্রিল মাসে মালদার শমসেরগঞ্জ এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আরও দুই ব্যক্তি—আলামিন শেখ ও শেখ সাহেব। তাদের ব্যাগ থেকেও উদ্ধার হয় জাল নোটের বড় চালান।
এসটিএফ ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা মনে করছে, এই সব ঘটনাগুলি আসলে একটি বৃহৎ চক্রের অংশ—যার শাখা ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজ্যের গভীরে।
এ যেন এক নিরব, কিন্তু ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক আগ্রাসন—যেখানে টাকার রঙ ঠিক থাকলেও, মূল্য শূন্য। আর তার মোকাবিলায় প্রশাসনের সামনে চ্যালেঞ্জ শুধুমাত্র জালনোট নয়, বরং একটি ছায়া-চক্রের আস্ত অস্তিত্বকেই উন্মোচন করা।