কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:শিলিগুড়ি:
সকালটা ছিল অনেকটা অন্যরকম। খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে ছায়া ঘেরা চৌকিতে টহল দিচ্ছিল এসএসবি-র একটি টহলদল। নেপালের দিকে গাড়ির যাতায়াত চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। হঠাৎ ছয়জন যুবক-যুবতীর একটি দল নজরে পড়ে জওয়ানদের। তাঁদের চোখে-মুখে অস্থিরতা, আচরণে ছিল কিছুমাত্র স্বাভাবিকতার ছোঁয়া নেই। শুরু হয় জেরা—তারপর ফাঁস হতে থাকে একে একে ভুয়ো পরিচয়ের জাল। ধরা পড়লেন ছয় জন মায়ানমারের নাগরিক, যাঁরা নেপালে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন ভারতীয় আধার কার্ডের সাহায্যে। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন একজন মহিলা এবং বাকি পাঁচ জন যুবক। তাঁদের সবার বয়স কলেজ পড়ুয়া বয়সী, অর্থাৎ ২০-২২ বছর।
এসএসবি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করায় তিনজনকে আলাদা করে জেরা শুরু হয়। তাঁদের কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধরা হয় আরও তিনজনকে।
তাঁদের পকেট থেকে উদ্ধার হয় আধার কার্ড—নাম ভারতীয়, ঠিকানাও ভারতের। কিন্তু উচ্চারণে, চেহারায়, আচরণে ধরা পড়ে ভিন্নতা। তারপর চাপ তৈরি হতেই স্বীকার করে নেন—“আমরা মায়ানমারের নাগরিক। দিল্লিতে ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করিয়েছি।”
সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক—এই ছয়জনের কারোর কাছেই ছিল না কোনও বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ভারত হয়ে নেপাল পেরিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার ছক কষছিলেন তাঁরা।
তদন্তে উঠে আসছে, দিল্লিতে কিছু অসাধু এজেন্টের মাধ্যমে বহু বিদেশিকে এভাবে ভুয়ো পরিচয়ে আধার কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে।
এসএসবি ধৃতদের খড়িবাড়ি থানার হাতে তুলে দিয়েছে। রবিবার তাদের শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে একটি বড় চক্র, যারা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বেআইনি অনুপ্রবেশে সাহায্য করছে।
প্রসঙ্গত এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রতিবারই প্রশ্ন উঠছে—
-
কীভাবে বিদেশি নাগরিকরা এত সহজে আধার কার্ড তৈরি করছে?
-
দিল্লি বা অন্যান্য মেট্রো শহরে এই চক্রগুলো কিভাবে সক্রিয় থাকছে প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে?
পানিট্যাঙ্কির এই ঘটনা হয়তো বরফের চূড়া মাত্র। এর নিচে লুকিয়ে রয়েছে অনেক বড় অনুপ্রবেশ ও পরিচয়পত্র জালিয়াতির কারবার, যার শিকড় আরও গভীরে।