কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
যুবশক্তি কি মুখ খুঁজে ফিরছে? না কি পুরনো ছাঁচে ঢেলে দিচ্ছে নতুন মুখকে?
আসলে এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের করিডোরে, চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষণের অন্তর্বর্তী বৈঠকে।
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নামটা এখন আর শুধুমাত্র ডিওয়াইএফআই-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি এখন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। অর্থাৎ, বাম রাজনীতিতে এখন তিনি তরুণ নেতৃত্বের ব্র্যান্ড। এই উন্নীত হওয়া মানেই, যুব সংগঠনে তাঁর অধ্যায়ের ইতি। তাই প্রশ্ন—এর পরে?
এই উত্তর মিলবে বহরমপুরে। ২১-২৩ জুন, নবাবের শহরে আয়োজিত হতে চলেছে ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্মেলন। সেখানেই স্থির হবে, কে হবেন মীনাক্ষীর উত্তরসূরি।
তবে বিষয়টা শুধুই ‘নতুন নাম’ নির্বাচন নয়। এর পিছনে কাজ করছে সিপিএমের সেই পুরনো অভ্যন্তরীণ সমীকরণ—যা গঠনতন্ত্রের পাতায় লেখা না থাকলেও দলের হালচালে প্রবল প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমানের অয়নাংশু সরকার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার অপূর্ব প্রামাণিক—দুই যুব নেতার নাম উঠে আসছে প্রবলভাবে। আবার একাংশ বলছে, সভাপতির পদে থাকা ধ্রুবজ্যোতি সাহাও হতে পারেন সম্পাদক।
কিন্তু এই তালিকায় কৌশল আছে, বার্তা আছে। বর্ধমান যেন হয়ে উঠেছে যুব সংগঠনের ‘ক্যাডার নার্সারি’। আবার, মীনাক্ষীর মতো চেনা মুখের জায়গায় হঠাৎ কোনও অচেনা, সম্ভাবনাময় মহিলা নেতৃত্বকে আনাও হতে পারে আলিমুদ্দিনের পরবর্তী চাল।
কলতান দাশগুপ্ত, যিনি ডিওয়াইএফআই–এর একাধিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন, তিনিও আলোচনায় থাকলেও বয়সের ঊর্ধ্বসীমা তাঁকে পিছিয়ে দিচ্ছে। সিপিএমের তরুণ প্রজন্ম চাইছে নতুন, চটপটে, ক্যাম্পাস-সংলগ্ন কোনও মুখ, যিনি ‘আন্দোলনের মাঠে যেমন, মিডিয়ার সামনেও সাবলীল’—এই যুগের রাজনীতি তারই দাবি রাখে।
একসময় ছাত্র-যুব সংগঠনের নেতৃত্বে নির্দিষ্ট জেলা ভিত্তিক সমতা রক্ষার অলিখিত রীতি ছিল। উত্তর ২৪ পরগনা থাকলে যুব ফ্রন্টে থাকতেন বর্ধমানের প্রতিনিধি। কিন্তু সেই রীতিও আজ প্রশ্নের মুখে। কারণ এসএফআই-এর বর্তমান নেতৃত্ব এসেছেন কলকাতা ও কোচবিহার থেকে। এমনকি ডিওয়াইএফআই সভাপতিও মুর্শিদাবাদের। তাহলে সম্পাদক কেন শুধু পূর্ব বর্ধমান বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে হবেন—এই প্রশ্নও উঠছে।
আপাতত, সব নজর বহরমপুরের দিকেই। নবীন মুখের আবির্ভাব হবে, না কি পরিচিত মুখকেই আরও বড় দায়িত্বে তোলা হবে—তা সময় বলবে। তবে এটুকু স্পষ্ট, রাজ্য রাজনীতির কঠিন দিনে যুব নেতৃত্বে নতুন দিশা খোঁজা শুরু করেছে সিপিএম। আর সেই পথচলায় ‘মীনাক্ষী অধ্যায়ের’ পরবর্তী অধ্যায় রচনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।