কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব প্রতিনিধি:
দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের নামকরণ ঘিরে শুরু হওয়া বিতর্কে একপ্রকার পিছু হটতে বাধ্য হল রাজ্য সরকার—এমনটাই দাবি করলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবায়েত ভাইভানি দাস মহাপাত্র। তাঁর বক্তব্য, “মমতা দিদিকে শেষ পর্যন্ত ‘ধাম’ শব্দটি বাদ দিতেই হল। এটাই ধর্মের জয়, জগন্নাথ ভক্ত ৪.৫ কোটি মানুষের জয়।”
সম্প্রতি দীঘায় নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের নাম “জগন্নাথ ধাম” রাখাকে কেন্দ্র করে ওড়িশা ও বাংলার মধ্যে ধর্মীয় আবেগে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। ওড়িশার ধর্মপ্রাণ মানুষের একাংশের দাবি ছিল, “ধাম” শব্দটি শুধুমাত্র পুরীর ১২শ শতকের জগন্নাথ মন্দিরের জন্যই প্রযোজ্য। সেই আবেগে আঘাত করায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তীব্র সমালোচনায় মুখর হন ওড়িশার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব।
ভাইভানি দাস মহাপাত্র বলেন, “জগন্নাথ মন্দির বানানো ভালো কাজ। কিন্তু ‘ধাম’ শব্দ দিয়ে আপনি ধর্মীয় মহত্বকে ছোট করতে পারেন না। পুরী থেকে এক টুকরো কাঠও যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত এখানেই ব্যর্থ হল।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের যেকোনো জায়গায় জগন্নাথ মন্দির গড়া যেতে পারে, তবে তা অবশ্যই পুরীর নির্ধারিত রীতি অনুসারে এবং প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে।”
ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃ্থ্বীরাজ হরিচন্দন জানান, দীঘার মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার যে মূর্তি গড়া হয়েছে, তাতে ‘ধারুকাঠা’ (পবিত্র কাঠ) ব্যবহার হয়নি। শুধুমাত্র সাধারণ নিম কাঠেই নির্মাণ করা হয়েছে এই মূর্তিগুলি।
তিনি জানান, দীঘার মন্দির ঘিরে সমস্ত ঘটনার খতিয়ান নিতে পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা করা হচ্ছে একটি নতুন Standard Operating Procedure (SOP)-র, যাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে, পুরীর বাইরে কোন কোন ক্ষেত্রে সেবায়েতরা ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবেন।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, “পুরীর মন্দিরকে আমরা সম্মান করি, দীঘার মন্দিরকেও করি। কালী মন্দির কিংবা গুরুদ্বার সব জায়গাতেই থাকে। তাহলে এই ইস্যুতে এত রাগ কেন?”
তবে ওড়িশার আপত্তির মুখে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের নামফলক থেকে “ধাম” শব্দটি সরিয়ে শুধুই “জগন্নাথ মন্দির” লেখা হচ্ছে বলেই প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নামকরণ-সংক্রান্ত বিতর্ক একদিকে ধর্মীয় আস্থার প্রশ্ন তো বটেই, অন্যদিকে তা রাজনৈতিক উত্তেজনারও কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ধাম’ শব্দ ব্যবহার এবং তার পরবর্তী সাফাই—এই দুয়ের মধ্যেই ফুটে উঠছে রাজ্য-রাজনীতির সাংস্কৃতিক কূটনীতি।