কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং তা এখন “জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন”—এই বার্তা দিয়ে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া সমস্ত সিনেমার ওপর বসবে ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক।
রবিবার রাতে তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকার চলচ্চিত্র শিল্প দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। অন্যান্য দেশগুলো নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের নির্মাতাদের বাইরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু প্রতিযোগিতা নয়—এ এক সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র! এবং তাই, এটা একটি জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি।”
ট্রাম্পের নির্দেশে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্স ও ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসকে বলা হয়েছে বিদেশি নির্মিত যে কোনও সিনেমা আমদানির উপর শতভাগ ট্যারিফ আরোপ করতে। তবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পের জটিল ও বহুজাতিক প্রকৃতি এই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নে কীভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বের বহু সফল চলচ্চিত্র যেমন Mission: Impossible বা Fast & Furious, একাধিক দেশে শুট করা হয় এবং তাতে যুক্ত থাকে বহু আন্তর্জাতিক অংশীদার। ফলে এমন ট্যারিফ কি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
ট্যাক্স ইনসেনটিভের লোভে বহু প্রযোজকই ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছেন টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার, যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার দিকে। ২০২৪ সালে আমেরিকার ঘরোয়া চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোডাকশন কমেছে ২৬ শতাংশ। এমনকি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে—সেরা ৫টি পছন্দের শুটিং লোকেশনের মধ্যে কোনও আমেরিকান শহরের নামই নেই।
লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, জর্জিয়া, নিউ জার্সি—এইসব শহর নিজেদের চলচ্চিত্র শিল্প ফেরাতে মোটা অঙ্কের ট্যাক্স ক্রেডিট এবং ক্যাশ গ্রান্ট ঘোষণা করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম সেই ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়িয়ে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, “যদি কেউ আমেরিকায় সিনেমা তৈরি করতে না চায়, তাহলে সেই সিনেমা আমদানিতে আমাদের শুল্ক বসানো উচিত। অন্য দেশগুলো আমাদের সিনেমা নির্মাণ ক্ষমতা চুরি করছে।”
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের এই রূঢ় শুল্কনীতি নতুন নয়। তাঁর প্রেসিডেন্সির সময়েও চীন, ইউরোপ ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক বসানোর নজির আছে। এবার লক্ষ্যবস্তু হল ‘সেলুলয়েড’ শিল্প।
মেল গিবসন, জন ভয়েট ও সিলভেস্টার স্ট্যালোনকে “বিশেষ দূত” করে হলিউডকে “বড়ো, ভালো ও শক্তিশালী” করে তোলার ডাক ট্রাম্প অনেক আগেই দিয়েছিলেন। কিন্তু প্যান্ডেমিক, শিল্প সংঘর্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত এই ইন্ডাস্ট্রির সামনে এখন শুল্ক যুদ্ধই কি আদৌ কার্যকর অস্ত্র হবে?
এখন দেখার, ট্রাম্পের এই ‘সিনেমা-জাতীয়তাবাদ’ রাজনৈতিক মাঠে কতটা জনপ্রিয়তা পায় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগত কীভাবে এর মোকাবিলা করে।