কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা:
সকাল ঠিক সাড়ে সাতটা। দক্ষিণ কলকাতার করায়া থানার পাশেই তারক দত্ত রোডের একটি বহুতলে কয়েকটি গাড়ি থামে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেশ কয়েকজন আধিকারিক সোজা উঠে যান তিন তলার একটি ফ্ল্যাটে। আইনজীবী মুনমুন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্বামী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই আবাসন থেকে একের পর এক নথি উদ্ধার হতে থাকে।
কিন্তু কেন এই তল্লাশি?
উত্তর লুকিয়ে ‘ভুয়ো নথিপত্র’ আর ‘অযোগ্য পড়ুয়াদের’ নামে পাওয়া কোটি টাকার মেডিক্যাল কলেজ ভর্তির কেলেঙ্কারিতে।
সূত্রের খবর, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বিদেশি নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত NRI কোটায় ভুয়ো সার্টিফিকেট দেখিয়ে বহু অযোগ্য পড়ুয়াকে ভর্তি করানো হয়েছে। আর তার জন্য কোটির পর কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে গোপনে। যাঁদের আসন পাওয়ার কথা ছিল মেধা তালিকায়, তাঁরা বাদ পড়েছেন এই টাকার খেলার জেরে।
ইডি জানিয়েছে, এই ভুয়ো ভর্তির নেপথ্যে রয়েছে ‘দালাল চক্র’। কলকাতার নিউটাউনের সিই ২৮–এর একটি বিল্ডিংয়ে অবস্থিত ‘এডুকেশন ওয়ার্ল্ড’ নামে এক কোচিং সেন্টারে হানা দিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি যুক্ত এক সন্দেহভাজন মধ্যস্থতাকারী সৌরভ সাহার সঙ্গে, যিনি এই চক্রের মূল যোগাযোগকারী হিসেবে পরিচিত।
এটাই প্রথম নয়। এর আগে হালদিয়ায় প্রাক্তন তমলুক সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের বাড়িতেও হানা দিয়েছিল ইডি। তল্লাশি হয়েছিল তাঁর পরিচালিত মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে। এই দুর্নীতির আঁচ ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ২৮টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত সুপ্রিম কোর্ট কিছুদিন আগেই কড়া প্রশ্ন তোলে—NRI কোটার নামে যদি দেশের ভেতরেই এই ধরনের দুর্নীতি চলে, তবে “স্বচ্ছ” ভর্তির দাবিটা কোথায় দাঁড়ায়? এরপরই ইডি আরও সক্রিয় হয়। সূত্র বলছে, এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে একাধিক রাজ্যের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ থাকতে পারে।
এই চক্র শুধু টাকা নয়, নাড়িয়ে দিচ্ছে উচ্চশিক্ষা ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার মেরুদণ্ডকে। মেধা যদি অর্থের কাছে মাথা নত করে, তবে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎই বা কোথায় দাঁড়াবে?
এখন প্রশ্ন একটাই—এই ভুয়ো ভর্তি চক্রের শেষ সীমান্তটা কোথায়?