কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা :
কলকাতা মেট্রোর নতুন গ্রিন লাইনে সব কিছু প্রস্তুত—টানেল নির্মাণ শেষ, সিআরএস ছাড়পত্র মিলেছে, ট্রায়াল রান সাফল্যের সঙ্গেই সম্পন্ন। শুধু নেই একটি জিনিস—রেল বোর্ডের “সবুজ সিগন্যাল”। আর সেই একটিমাত্র সিগন্যাল না মেলায় হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত নির্বিঘ্ন মেট্রো চলাচল হয়ে উঠেছে ‘সময়ের অপেক্ষা’র প্রতীক।
তবে প্রশ্ন উঠছে—এই ‘সময়’টা কার? রেল বোর্ডের? না কি দিল্লির লালবাতি ঘরের বিশেষ সময়সূচির?
মেট্রোর অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, সিআরএস-এর অনুমোদন পাওয়ার পরপরই নিয়ম অনুযায়ী মেট্রোর বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু করা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মেট্রো চলতে হলে চাই আরেকটা সার্টিফিকেট—রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির! আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়া যে ট্রেন গড়ায় না, তা শহরের মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছে অরেঞ্জ লাইনের অভিজ্ঞতায়।
গ্রিন লাইনের উদ্বোধনের ক্ষেত্রেও এখন প্রশ্ন, “প্রধানমন্ত্রী সময় দেবেন কবে?” কারণ মোদীজির ক্যালেন্ডারে জায়গা না পেলে শহরের মেট্রো লাইনে ট্রেন নয়, কেবল ধোঁয়াশাই গড়ায়।
হাওড়া ময়দান থেকে শিয়ালদহ, সেখান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ—মাত্র ২৫ মিনিটের যাত্রা। কিন্তু সেই যাত্রা শুরু হতেই পারছে না শুধুমাত্র একটি উদ্বোধনের জন্য। শহরের কয়েক লক্ষ যাত্রী তাকিয়ে আছেন সেই মুহূর্তটির দিকে, যখন প্রথম মেট্রোর দরজা খুলে বলবে, “দয়া করে ভিতরে চলে আসুন।”
কলকাতা মেট্রো কর্মীদের সংগঠন এমআরএমইউ মনে করিয়ে দিচ্ছে—গত কয়েক বছরে দেশের প্রায় প্রতিটি মেট্রো প্রকল্পের ফিতে কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। সুতরাং, গ্রিন লাইন ও ইয়েলো লাইনের (নোয়াপাড়া–বিমানবন্দর) যৌথ উদ্বোধনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
১৯৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধী কলকাতা মেট্রোর শিলান্যাস করেছিলেন, কিন্তু উদ্বোধন করেননি। আর এখন? উদ্বোধন না হলে যেন প্রকল্প পূর্ণতা পায় না! অদ্ভুত এক সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতা—যেখানে সুড়ঙ্গ আছে, ট্রেন আছে, যাত্রীও আছে, কেবল দরজা খোলার অনুমতিটা নেই।
তাই প্রশ্নটা শহরের—কবে আসবে সবুজ সংকেত? না কি প্রস্তুত সুড়ঙ্গগুলো অপেক্ষা করবে আরেকটি সিআরএস মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার?
মেট্রোর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শহর আজ বলে উঠতে চাইছে—“লাল ফিতের গ্যাঁড়াকলে না পড়ে, এবার সবুজ আলো জ্বলুক।”