কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশাখাপত্তনম | মঙ্গলবার
‘করাচি’—একটি শহর, যা বর্তমানে পাকিস্তানে। আর এই নামই যদি জুড়ে বসে কোনও ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে? সেটাই এখন বিতর্কের কেন্দ্র।
বিশাখাপত্তনমের ভেনকোজিপালেম এলাকায় অবস্থিত ‘করাচি বেকারি’-কে ঘিরে উঠেছে তীব্র আপত্তি। দাবি উঠেছে, বেকারির নাম অবিলম্বে বদলাতে হবে। এবং সেই দাবিকে সামনে রেখে মঙ্গলবার জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখাল জনজাগরণ সমিতি নামে একটি সংগঠন।
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাঁদের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশেরও দুই বাসিন্দা ছিলেন। হামলার পিছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার পরই জনজাগরণ সমিতি প্রশ্ন তোলে—“ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের শহরের নামে কেন থাকবে একটি বেকারি?”
সেই আবেগ থেকেই ভেনকোজিপালেমের করাচি বেকারির সামনে তারা দাবি তোলে—নাম বদল করতেই হবে। এমনকি নাম না বদলালে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে।
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা বেকারির নাম করাচি হলেও, এর জন্ম কিন্তু পাকিস্তানে নয়—ভারতেই।
বছরটা ছিল ১৯৫৩। দেশভাগের কয়েক বছর পর, করাচি থেকে হায়দরাবাদে চলে আসা এক হিন্দু উদ্বাস্তু—কানচাঁদ রামানি। স্মৃতির টানে ও নিজের শিকড়কে সম্মান জানাতেই তিনি বেকারির নাম রাখেন ‘করাচি বেকারি’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি হয়ে ওঠে এক জনপ্রিয় ভারতীয় ব্র্যান্ড, যার শাখা আজ ভারতের নানা রাজ্যে।
বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, “দেশভাগের এত বছর পরও কেন পাকিস্তানি শহরের নাম বহন করবে একটি বেকারি?”
আর ইতিহাস সচেতনদের পাল্টা যুক্তি—“এই করাচি আসলে এক উদ্বাস্তুর স্মৃতি। এই নাম ভারতীয় ইতিহাসেরই এক অধ্যায়, আত্মপরিচয়ের প্রতীক।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এমন বিতর্ক নতুন কিছু নয়। অতীতে মুম্বই, বেঙ্গালুরু সহ একাধিক শহরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র নামের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠান বা সিনেমা নিয়েও বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে—একটি নাম, যার শিকড় ইতিহাসে, তাকে কি বর্তমান আবেগের চাপে মুছে দেওয়া যায়?
আর তেমনটা হলে, আগামী দিনে কি ইতিহাস-স্মৃতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হবে আমাদের সামগ্রিক পরিচয়?