কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
দেবজিৎ গাঙ্গুলী
দেশজুড়ে চলছে তল্লাশি, তদন্ত আর জাল বিস্তার। আর সেই জালে এবার ধরা পড়েছে বাংলার এক প্রান্তের সম্ভাব্য হাওয়ালা অপারেটরের নাম। প্রশ্ন উঠছে— জঙ্গি ফান্ডে কি সত্যিই জড়িত বাংলা?
৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে একজন পশ্চিমবঙ্গের এ দাবি দিল্লির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের। নাম বা পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে না এলেও, জানা গিয়েছে তিনি এক সীমান্তবর্তী জেলার বাসিন্দা। তাঁর আর্থিক লেনদেনের উপর এখন কেন্দ্রীয় নজরদারির কঠোর নজর।
‘টেরর ফান্ডিং নেটওয়ার্ক’— নামটি শুনতে সিনেমার মতো লাগলেও বাস্তবের চিত্র ভয়ঙ্কর। হাওয়ালার ছদ্মবেশে কোটি কোটি টাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশ-বিদেশের মধ্যিখানে। সেই টাকার গন্তব্য জৈশ-ই-মহম্মদ বা লস্কর-এর মতো জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্রভাণ্ডার।
সূত্র জানাচ্ছে, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশের ট্রাস্ট ও মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে এই অর্থ পাঠানো হয় পাকিস্তানে। কিছু ক্ষেত্রে “দান” বা “শিক্ষা সহায়তা”-র নামে এই টাকা ঢোকে ট্রাস্টে। তারপর তা সোজা চলে যায় কাশ্মীর সীমান্তবর্তী জঙ্গি ক্যাম্পগুলিতে।
এখন তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, পশ্চিমবঙ্গের এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যুক্ত আছে কি না আন্তর্জাতিক হাওয়ালা সিন্ডিকেট।
তাঁর নামে একাধিক সন্দেহজনক ট্রানজাকশন ধরা পড়েছে, যেগুলি সরাসরি যুক্ত নয় কোনও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার সঙ্গে। বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ঘুরিয়ে পাঠানো হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা, যার উৎস ও ব্যবহার দুটোই ধোঁয়াশায়।
এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, “এই ধরনের ট্রানজাকশন মূলত জঙ্গি কার্যকলাপকে আর্থিক রসদ জোগায়। মাদ্রাসা, এনজিও কিংবা ব্যবসার আড়ালে এই অর্থ স্থানান্তর হচ্ছে।”
পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার আবহেই কেন্দ্র জোর দিচ্ছে অভ্যন্তরীণ ফান্ডিং নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার উপর। কারণ বাহ্যিক আক্রমণের মোকাবিলা যতটা সম্ভব, ততটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে দেশের ভিতর থেকেই হওয়া আর্থিক সহায়তা।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের টার্গেট এখন ৩৬ জন ভারতীয় হাওয়ালা কারবারি। তাঁদের মাধ্যমে জঙ্গিদের অর্থ সরবরাহ বন্ধ করাই মূল লক্ষ্য। আর সেখানেই বাংলার ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ।
এই মুহূর্তে বাংলার তদন্তকারীরাও কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছেন। প্রশ্ন একটাই এই রাজ্যের মাটি জঙ্গি অর্থনীতির চক্রে কীভাবে জড়াল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এখন গোটা গোয়েন্দা পরিকাঠামো নেমেছে তল্লাশিতে।
এই ধরনের ঘটনাগুলি শুধু আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নই নয়, তা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত। তাই তদন্তে কোনও ত্রুটি না রেখে পর্দা ফাঁস করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য।