কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক : নিজস্ব সংবাদদাতা :
পশ্চিম মেদিনীপুরে বনদপ্তরের নতুন প্রকল্পে আশার আলো দেখছেন গ্রামবাসী
সন্ধে নামলেই হঠাৎ আলো নেভে। দূরে ঝোপের আড়াল থেকে ভেসে আসে ডাল ভাঙার শব্দ, কচুর পাতার ফড়ফড়ানি, আর তারপরেই আতঙ্কিত চিৎকার—“হাতি এসেছে!” পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়াকাটা, লালগড়, চাঁদড়া—এলাকাগুলির মানুষের কাছে এই দৃশ্য এখন নিত্যদিনের রুটিন।
কিন্তু এ বার সেই আতঙ্কে কিছুটা রাশ টানতে মাঠে নামছে বাঁশগাছ। না, শুধু প্রকৃতির উপাদান নয়, এই বাঁশগাছ এখন বনদপ্তরের এক নতুন ‘হাতি প্রতিরোধী কৌশল’।
অন্যদিকে বনদপ্তরের হিসাব বলছে, বিগত কয়েক বছরে এই জঙ্গল এলাকায় ‘রেসিডেন্সিয়াল’ হাতির সংখ্যা বেড়েছে। তাদের আর ফিরতি নেই। কারণ? সহজে খাবার। ফসল, কচুরিপানা, ফল—সবই মেলে গ্রামে। ফলে লোকালয় এখন যেন হাতিদের ‘সুপারমার্কেট’।
অপরদিকে ‘হুলা পার্টি’ ও দিশি পদ্ধতি হাতি তাড়াতে প্রয়োগ হলেও, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আসেনি। গ্রামের মানুষ বলছেন—দিনরাত পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। আর হাতিরা দিন দিন বেশি নির্ভীক হয়ে উঠছে। বাঁশগাছ তাই বনদপ্তরের এই নতুন পরীক্ষার হাতিয়ার।
পিড়াকাটা রেঞ্জ অফিসার শুভজিত দাস জানাচ্ছেন, পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি রেঞ্জে ২৫ হেক্টর করে মোট ৭৫ হেক্টর জমিতে বাঁশ লাগানো হচ্ছে। বাঁশের কচি পাতা হাতির প্রিয় খাবার। আশা, খাবারের জোগান যদি জঙ্গলে থাকে, তাহলে লোকালয়ে ঢোকার প্রয়োজন পড়বে না।
এই পরিকল্পনার আদলে উত্তরবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাতেও আংশিক সাফল্য মিলেছে। এবার দক্ষিণবঙ্গেও সেই মডেল।
যদিও বাঁশগাছ মানেই তৎক্ষণাৎ সমাধান নয়, তবুও এক নতুন দিশার আশায় বুক বাঁধছেন চাঁদড়ার বাসিন্দা হরিসাধন মাইতি। তিনি বলেন, “আমাদের ফসল বাঁচলে, ঘরদোর ভাঙবে না—এই আশাতেই বাঁশগাছের দিক তাকিয়ে আছি।”
তবে শুধু গাছেই সমাধান নয়। বনদপ্তর সক্রিয়ভাবে সচেতন করছেন গ্রামবাসীদের—সন্ধ্যার পরে জঙ্গলপথ এড়িয়ে চলা, জমির চারপাশে আলো রাখা, এবং কখনোই উস্কানি না দেওয়া হাতিদের।
পরিকল্পনা সফল হলে এই মডেল ছড়িয়ে দেওয়া হবে গোটা জঙ্গলমহলে। তবে ততদিন কি হাতিদের হানা থামবে? বাঁশগাছ কি সত্যিই গ্রামে–জঙ্গলে শান্তির সেতু হতে পারবে?
এ প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে। আপাতত গ্রামের মানুষ বনদপ্তরের পরিকল্পনার দিকে তাকিয়ে আছেন—একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার আশায়।