কলকাতা টাইমস নিউজ ডেস্ক :
এক বিশেষ বিশ্লেষণে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুজিত দত্ত :
মঙ্গলবার রাত দেড়টার পর থেকেই আকাশে গর্জে উঠেছিল ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র। নিশানায় ছিল পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গিঘাঁটি। তার পরের কয়েক ঘণ্টা গোটা উপমহাদেশের মানচিত্র যেন কেঁপে উঠেছিল রাফাল, স্ক্যাল্প, হ্যামার আর দূরপাল্লার স্ট্র্যাটেজিক কৌশলে। বুধবার সকালে যখন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর খবর সামনে আসে, তখন শুধু ধ্বংস নয়, বার্তাও ছিল স্পষ্ট—ভারতের হাতে অস্ত্র আছে, আর সেই অস্ত্র দিয়ে জবাব দিতেও জানে ভারত।
পাহেলগামে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পরে ভারত এই পাল্টা অ্যাকশনে যেতে কেন ১৫ দিন সময় নিল? অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুজিত দত্ত জানালেন, উত্তর লুকিয়ে আছে মার্কিন ফাইটার পাইলট জন বয়েডের তৈরি সামরিক কৌশল OODA Loop-এ—Observe, Orient, Decide, Act।
এই চক্র যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, শত্রু ততই হতচকিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের মন্ত্রীদের রাতের সাংবাদিক সম্মেলনের পরও এই হামলার দিশা, গতি ও প্রযুক্তি তারা বুঝতেই পারেনি। ভারত ‘অ্যাক্ট’ পর্বে গিয়ে এমন আঘাত করেছে, যার প্রস্তুতির ছাপও রাডারে ধরা পড়েনি।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ শুধু আক্রমণ নয়, ছিল অত্যন্ত হিসেবি অস্ত্র বাছাই। কর্নেল দত্ত বলছেন, এটি নিছকই বোমাবর্ষণ নয়—এটি ছিল অস্ত্রের কৌশলগত ভাষায় দেওয়া বার্তা।
SCALP (Storm Shadow):
-
রেঞ্জ: ২৫০-৫০০ কিমি
-
পেলোড: ৪৫০ কেজি
-
ভূমি থেকে টার্গেট নির্ধারিত করে অদৃশ্যভাবে আঘাত হানে
-
উপযুক্ত স্থির ও শক্ত ঘাঁটি ধ্বংসের জন্য আদর্শ
হ্যামার:
-
রাফাল থেকেই লঞ্চ
-
রেঞ্জ: ১৫০-২৫০ কিমি
-
নিচু দিয়ে উড়ে যায়, ফলে রাডারে ধরা পড়ে না
-
উচ্চ নির্ভুলতায় আঘাত হানে
এই অস্ত্রগুলি পাকিস্তানের এয়ার রাডার ফাঁকি দিয়ে নিশানা ভেদ করতে পারছে—এটাই ভারতের বার্তা: “জায়গা নয়, লক্ষ্য আমাদের হাতে।”
পাকিস্তানের পালটা ড্রোন ও মিসাইল হামলাও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সফল মোতায়েন একদিকে যেমন পাকিস্তানের প্রযুক্তিকে ব্যর্থ করেছে, অন্যদিকে ভারতকে রক্ষা করেছে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে।
ভারত এই মুহূর্তে যে ‘অ্যাগ্রেসিভ ডিফেন্স’ মোডে, তাতে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা—দুয়ের মেলবন্ধনে আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারত তার অবস্থান মজবুত করেছে।
২০০১ সালে সংসদ হামলার পরে তৈরি হওয়া কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিনই আজকের অভিযানের মূল আধার। একাধিক IBG বা ইন্টিগ্রেটেড ব্যাটেল গ্রুপ মজুত রাখা হয়েছে সীমান্তের ধারে। প্রয়োজন পড়লেই ৫-১৫ কিমি ভিতরে গিয়ে দখল নেওয়ার জন্য প্রস্তুত তারা।
এই ধরণের অবস্থান ভারতের কূটনৈতিক চাপের ভাষাও তৈরি করে—শুধু যুদ্ধ নয়, দরাদরি-ও চলে অস্ত্রের শক্তিতে ভর করে।
অপারেশন সিঁদুর এক অর্থে তৃতীয় স্তরের জবাব—২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ২০১৯ সালে এয়ার স্ট্রাইক আর এবার ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভর হাইব্রিড অ্যাকশন।
ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে—জঙ্গি ঘাঁটি থাকলে খুঁজে বের করবে, আর আঘাত করলে পাল্টা দিতে সময় নেবে না।
তবে সেই আঘাত হবে নির্ভুল, কার্যকর ও আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাখ্যা করার মতো।
অস্ত্র বেছে নেওয়া এক সময় ছিল প্রতিরক্ষার প্রশ্ন, আজ তা কূটনীতির ভাষাও। অপারেশন সিঁদুর যেন সেই ভাষারই নতুন অভিধান।